ত্রিভুবনে ওঠা-নামায় পাইলটদের জটিল হিসাব-নিকাশ

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০১ পিএম, সোমবার, ১২ মার্চ ২০১৮ | ৩৯৩

বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত রয়েছে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের। তবুও পাইলটদের উড়োজাহাজ চালিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।

হিমালয় পর্বতমালার কারণে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি দেশ নেপাল। তাই প্রতিদিন প্রচুর যাত্রীও আসা-যাওয়া করেন এখানে। পর্বত ছাড়াও প্রায়ই ঘন কুয়াশা ঘিরে ফেলে ত্রিভুবন এয়ারপোর্টকে। এ কারণে ফ্লাইট পরিচালনায় বিপত্তিতে পড়তে হয় পাইলটদের। কিন্তু বিমান সংস্থাগুলো লাভের আশায় ঝুঁকিপূর্ণ এই এয়ারপোর্টে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

এই রুটে নিয়মিত চলাচল করেন এমন চার জন পাইলটের কাছ থেকে এমনই তথ্য জানা গেছে। তাঁরা বলেন, ত্রিভুবনে উড়োজাহাজ ওঠা-নামা করানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। অংকের জটিল হিসেব কষে অবতরণ করাতে হয়।

বিমান এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ক্যাপ্টেন এস এম নাসিমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এখন সুপার শপগুলোতে বৈদ্যুতিক মেশিনে মাংস কাটা হয়। একটু এদিক সেদিক হলে যিনি কাটছেন, তার হাত কেটে যেতে পারে। আবার ২ এর সঙ্গে ২ যোগ করে ৪ হয়। এখানেও হিসেব করতে হয়। কাঠমন্ডু এয়ারপোর্টও ঠিক তেমনি। এখানে হিসেবে ভুল হলেই বিপত্তি। আমরা ফকার মডেলের উড়োজাহাজ চালিয়েও সেখানে চলাচল করেছি। কিন্তু অনেক অত্যাধুনিক উড়োজাহাজও দুর্ঘটনায় পড়ছে।

ত্রিভুবনে একাধিক বার ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইনসের কয়েকজন পাইলট নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। চারপাশের উচুঁ পাহাড়-পর্বত ঘেরা। এখানে উড়োজাহাজ অবতরণ করাতে যেমন সর্তক থাকতে হয়, তেমনি ওঠানোর সময় তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতে হয়।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর থেকে এক ঘণ্টা সময় লাগে কাঠমণ্ডুর আকাশসীমায় যেতে। বোয়িং কিংবা এয়ারবাসের উড়োজাহাজগুলো ৩২০০০ ফুট থেকে ৩৬ হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে সেখানে উড়ে যায়। তবে ত্রিভুবনে অবতরণের সময় প্রধান বাধা একটি বিশাল পাহাড়, এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,৭০০ ফুট উচুতে অবস্থিত। ত্রিভুবন এয়ারপোর্টের নয় মাইল দূরে রয়েছে এই পাহাড়। এজন্য এই রানওয়েতে কোনো উড়োজাহাজই সোজা অবতরণ করতে পারে না। ওই পাহাড় পেরোনোর পরপরই খুব দ্রুত উড়োজাহাজ অবতরণ করাতে হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ত্রিভুবন হচ্ছে নেপালের একমাত্র ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। এর ব্যবস্থাপনা অপর্যাপ্ত ও দুর্বল। ২০১৬ সালের প্রথমদিকে টুইন অটার টার্বোপ্রিপ নামের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে এর ২৩ জন যাত্রীর সবাই প্রাণ হারান।

এদিকে বিবিসি বলছে, বিমানবন্দরটিতে আন্তর্জাতিক বিমান অবতরণের পর থেকে এপর্যন্ত ৭০ টিরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বলা হচ্ছে, এসব দুর্ঘটনায় ৬৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বিমানের পাশাপাশি সেখানে হেলিকপ্টারও বিধ্বস্ত হয়েছে।

ত্রিভুবন এয়ারপোর্টের আরেক বিপত্তির কারণ, এখানে অটোমেটিক ল্যান্ডিং সিস্টেমও নেই। এই পদ্ধতি থাকলে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে রানওয়ের ৫০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় থাকা উড়োজাহাজকে নির্দেশনা দেওয়া যায়। শাহজালালসহ বিশ্বের অন্যান্য বিমানবন্দরে অবতরণের সময় সাধারণত ৮০০ মিটার দূর থেকে রানওয়ের দিকে লক্ষ্য রাখেন পাইলটরা। কিন্তু অটোমেটিক ল্যান্ডিং সিস্টেম না থাকায় তিন কিলোমিটার দূর থেকে ত্রিভুবনের রানওয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হয় তাঁদের। তাছাড়া এর রানওয়ের দুপাশেই রয়েছে পাহাড়। কোনো কারণে উড়োজাহাজ ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট এলাকা পেরিয়ে গেলে আবার নতুন হিসেব কষে অবতরণ করাতে হয়।

এ তো গেল অবতরণের ঝক্কি। এবার উড্ডয়নের পালা। পর্বত-পাহাড়ের কারণে উড়োজাহাজ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আকাশের ওপর নিয়ে যেতে হয়। কারণ ২৫০০০ ফুট উচ্চতার অসংখ্য পর্বত রয়েছে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাড়ে ১১০০০ ফুট ওপরে নিয়ে যাওয়ার পরই পাইলট ঠিক করেন যে, কোন দিকে তাঁর উড়োজাহাজকে নিয়ে যেতে হবে।

সূত্রঃ প্রথম আলো