পরিষদের ছেঁড়া কম্বল দিয়ে গলায় ফাঁসে যুবককে হত্যার অভিযোগ

জেলা সংবাদদাতা,কক্সবাজার
প্রকাশিত: ১২:৩৯ পিএম, রোববার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ৪৭৯

কক্সবাজারের চকরিয়া ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদে বিচারের নামে মিরাজুল ইসলাম নামের (২৬) এক যুবককে অমানষিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত দেড়টার দিকে পরিষদের একটি কক্ষ থেকে মৃত অবস্থায় মিরাজের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই যুবক ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড রংমহল এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র।

স্থানীয়রা জানান, মিরাজুল ইসলাম পেশায় একজন দিনমজুর। গত আড়াইবছর পূর্বে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের রিংভং ছগিরশাহকাটা দক্ষিণ পাহাড় পাড়ার ওবাইদুল হাসানের মেয়ে তৈয়বা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে ১৪ মাসের একটি সন্তানও রয়েছে। গত কয়েকমাস ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে মতবিরোধ চলছিলো।

এরমধ্যে লামা উপজেলার ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মালুম্মা এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের কন্যা ইসমত আরা বেগমের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন মিরাজুল ইসলাম। গত ৬দিন পূর্বে মিরাজ ইসমত আরাকে নিয়ে চট্টগ্রামে পালিয়ে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের খবর পেয়ে প্রথম স্ত্রী তৈয়বা বেগম ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে শালিশী বিচার দেন।

মিরাজুল ইসলাম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী ইসমত আরাকে চট্টগ্রাম থেকে বিচারের কথা বলে নিয়ে আসেন তারই বড় ভাই মিজানুর রহমান। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ডুলাহাজারা মালুমঘাট স্টেশনে পৌছার পর ইউপি’র মেম্বার শওকত ওসমান ও ফখরুউদ্দিন তাকে গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে তারা মারধর করেন। পরে তাকে ডুলাহাজারা পরিষদে রাখা হয়। আর দ্বিতীয় স্ত্রী ইসমত আরাকে লামার ফাঁশিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদারের হেফাজতে দেওয়া হয়। ডুলাহাজারা ইউপি পরিষদে মিরাজকে ব্যাপক মারধর করা হয়। পরে তাকে একটি কক্ষে বন্দিও রাখা হয়।

ডুলাহাজারা পরিষদের চৌকিদার নুরুল ইসলাম বলেন, মিরাজকে পরিষদের ৩নং কক্ষে বন্দি রাখা হয়। পাহারার দায়িত্বে ছিলাম আমরা দু’জন। একপর্যায়ে রাতে তার সাড়া-শব্দ না পেয়ে মিরাজকে ডাকা হয়। পরে একপর্যায়ে ওই কক্ষের পেছনের জানালা দিয়ে গিয়ে দেখি, সে কম্বলের ছেঁড়া অংশ দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলছে।

ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, প্রথম ‘স্ত্রী ও সন্তান থাকার পরও মিরাজ অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামে পালিয়ে যায়। পরে ওই মেয়েসহ তাকে ধরে আনে পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি সমাধানের জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে বিচারে দিন ধার্য্য ছিলো। যাতে পালিয়ে যেতে না পারে পরিষদের একটি কক্ষে বন্দি রাখা হয়। সেখানে কম্বলের ছেঁড়া অংশ দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পুলিশে হেফাজতে না দিয়ে মিরাজকে কেন ইউপি পরিষদের ভবনে বন্দি রাখা হলো। এনিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। সে অন্যায় করলে পুলিশের কাছে দিতে পারতো। কেন তাকে পরিষদের মধ্যে বন্দি রাখা হয়েছে ?
স্বজনরা জানান, কম্বলের ছেড়া অংশ দিয়ে কিভাবে মিরাজ আত্মহত্যা করেছে তা বোধগম্য নয়। তাকে বিচারের নামে অমানষিক নির্যাতন করার কারণে সে দূর্বল হয়ে পড়েছিলো। একপর্যায়ে রাতে দেড়টার দিকে সে মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়ে। পরদিন সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার ড. ইকবাল হোছাইন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছ খবর পেয়ে এসআই এনামকে নিয়ে পরিষদের ভবন থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মিরাজের লাশ উদ্ধার করি। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।