পুনর্নির্ধারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট

সরকারের প্রতি বছরে আয় বাড়বে প্রায় ২০০ কোটি টাকা

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ৪৫৪

আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেটের নিম্নসীমা ১ দশমিক ৫ সেন্ট থেকে বাড়িয়ে ১ দশমিক ৭৫ সেন্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বর্ধিত এ হারের ভিত্তিতে আয় ভাগাভাগির অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এতে বর্তমানে আসা আন্তর্জাতিক কলের সংখ্যা অনুযায়ী সরকারের আয় বাড়বে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অনুমোদনের পর আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশনের নতুন হার কার্যকর করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশনের বিদ্যমান সর্বনিম্ন হার মিনিটপ্রতি দেড় সেন্ট হলেও সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত রয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ সেন্ট। ফলে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরগুলো ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট বাড়িয়ে ২ সেন্ট করে। তবে কল টার্মিনেশন রেট সরকার বাড়ালেও ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ও সেলফোন অপারেটরদের সঙ্গে দেড় সেন্ট হিসেবেই আয় ভাগাভাগি করছে তারা। এতে তাদের বাড়তি আয় হলেও রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার ও সংশ্লিষ্ট অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে ২ দশমিক ৫ সেন্ট করেছে বিটিআরসি। তবে আইজিডব্লিউগুলো সরকারের সঙ্গে আয় ভাগাভাগি করবে ১ দশমিক ৭৫ সেন্ট হিসেবেই। এতে বছরে ১৮০ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত আয় হবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, এর আগে সাময়িকভাবে কল টার্মিনেশন রেট পরিবর্তন করা হয়েছিল। বাংলাদেশের কল টার্মিনেশন রেট পরিবর্তনের প্রভাব বিদেশী অপারেটরের খুচরা কলরেটের ওপর পড়ছে না। এতে বাংলাদেশে কল টার্মিনেশন রেট কমানো হলেও প্রবাসী বাংলাদেশীরা তার কোনো সুফল পান না। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কল টার্মিনেশন রেট পুনর্নির্ধারণের এ উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে এটি কার্যকর করা হবে।

অবৈধ পথে আসা আন্তর্জাতিক কল হ্রাস করতে ২০১৪ সালের জুলাইয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে কল টার্মিনেশন চার্জ কমানোর বিষয়ে প্রস্তাব দেয় বিটিআরসি। এতে কলপ্রতি ১ দশমিক ৫ সেন্ট নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়।

একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট ছয় মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে কমিয়ে আনার বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে বিটিআরসি।

এ সময় মিনিটপ্রতি সর্বনিম্ন রেট (ফ্লোররেট) ৩ সেন্ট থেকে কমিয়ে দেড় সেন্ট করা হয়। পাশাপাশি কল আদান-প্রদান সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের আয় ভাগাভাগির অংশও অস্থায়ীভিত্তিতে পুনর্নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে অপারেটরদের সঙ্গে বিটিআরসির রাজস্ব ভাগাভাগির কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক কল থেকে প্রাপ্ত আয়ের মধ্য থেকে বিটিআরসি ৪০, আইজিডব্লিউ ২০, ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ১৭ দশমিক ৫ ও অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস (এএনএস) প্রোভাইডার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ পেয়ে থাকে। আইজিডব্লিউর মাধ্যমে আসা এসব কল আইসিএক্স হয়ে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দেয় সেলফোন বা ফিক্সড ফোন অপারেটররা।

পরীক্ষামূলকভাবে কল টার্মিনেশন চার্জ কমানোর পর ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৫ কোটি আন্তর্জাতিক কল আসে দেশে। নতুন এ নিয়ম চালুর পর দৈনিক আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল বেড়ে দাঁড়ায় গড়ে ১১ কোটি মিনিটে। তবে কলের পরিমাণ বাড়লেও সরকারের আয় কমে যায়। আর পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা এ ব্যবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে একাধিকবার।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোসহ ডাটাভিত্তিক বিভিন্ন ওভার দ্য টপ (ওটিটি) অ্যাপের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে সরাসরি ডায়াল করা ভয়েস কলের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমছে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে দেশে আসা আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল ছিল ৩ হাজার ৭৪১ কোটি মিনিটের বেশি।

পরের বছর এটি কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৮৯ কোটি মিনিট। আর গত বছর আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩০১ কোটি মিনিটের কিছু বেশি। দৈনিক হিসাবে এটি ৬ কোটি ৩০ লাখ মিনিট। আগামীতে ওটিটি অ্যাপের ব্যবহার আরো বাড়বে। ফলে সরাসরি ডায়ালের মাধ্যমে ভয়েস কলের প্রয়োজনীয়তা আরো কমে আসবে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরাসরি ডায়ালের মাধ্যমে কল টার্মিনেশনকে মূলত প্রিমিয়াম সেবা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আর এজন্য এসব দেশে আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেটও বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি এ অঞ্চলের দেশগুলোতেও আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট বেশি। শ্রীলংকায় আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট ১২ দশমিক ৭৫ সেন্ট, মালদ্বীপে ৬৮ সেন্ট, নেপালে ১৫ সেন্ট ও আফগানিস্তানে ১৭ দশমিক ২ সেন্ট।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানে ২০১৫ সালের ২৪ জুন পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় দ্বিস্তরবিশিষ্ট কল আদান-প্রদানের নতুন ব্যবস্থা আইজিডব্লিউ অপারেটর সুইচ (আইওএস)। একই বছরের ২৭ জুন থেকে আইওএসের মাধ্যমে সব আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান করা হচ্ছে। সাত আইজিডব্লিউর উদ্যোগে গঠন করা আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) এটি পরিচালনা করছে। নতুন এ ব্যবস্থার আওতায় আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশনের দায়িত্ব পালন করছে উদ্যোক্তা সাত আইজিডব্লিউ।

সূত্র:বণিক বার্তা/পিএইচ