টাঙ্গাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোমিনুর রহমান স্মৃতি বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১১:৫০ এএম, শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ৫৯৪

টাঙ্গাইলে নানা-উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রথম বারের মত বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা প্রয়াত মোমিনুর রহমান স্মৃতি বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে ।

১৬ ফ্রেব্র“য়ারি সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত শহরের মডেল সরাকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় । জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ১৬৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনকারীরাই শুধু এ বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করার সুযোগ পেয়েছে ।

এছাড়াও অংশগ্রহনকারী সকলকেই প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোমিনুর রহমানের সহধর্মিনী জাকিয়া পারভিন মেডেল এবং মিষ্টি মুখ করিয়ে দেন । এর আগে টাঙ্গাইল জেলায় কোন বৃত্তি পরীক্ষাতেই অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের মেডেল এবং মিষ্টি মুখ করানো হয় নি । এই প্রথম টাঙ্গাইলে কোন বৃত্তি পরীক্ষায় এই রকম আয়োজন করা হয় । এটি নি:সন্দেহে টাঙ্গাইল তথা বাংলাদেশের অন্য সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি মডেল হয়ে থাকবে ।

প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোমিনুর রহমানের সহধর্মীনি অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাকিয়া পারভিন এর সভাপতিত্বে আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণীতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম মো. মোশারফ হোসেন, এজিএম মো. আমিনুর রহমান, গ্রামীন ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম মো. জাহাঙ্গীর হোসেন , সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আলমগীর হোসেন, সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. আবু নাসের, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হারুন-উর রশিদ, আব্দুল কাদের , সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আখতারুন্নাহার, দেলদুয়ার উপজেলার সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সানোয়ার হোসেন, বাসাইল উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার কে এম গোলাম মহিউদ্দিন, কালিহাতী উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার মাহবুর রহমান চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহিদ হোসেন খান, অবসরপ্রাপ্ত সহকারি উপজেলা জেলা শিক্ষা অফিসার হরেন্দ্র কুমার বসাক, সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অফিসার মো. আমিনুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজিয়া রহমানসহ অংশগ্রহনকারী পরীক্ষা এবং অভিভাবকরা ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তসলিমা জাহান ।

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে খাতা মূল্যায়ন করে ফলাফল ঘোষনা করা হয় । পরীক্ষায় ১৩২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেছেন । এর মধ্যে মোট ২২ জন পরীক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে । ১০ জন ট্যালেন্টপুলে এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে ১২ জন পরীক্ষার্থী । বৃত্তিপ্রাপ্ত ২২ জন শিক্ষার্থীকে নগদ অর্থ ও সনদ প্রদান করা হয় । এছাড়াও পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী সকলকেই মেডেল প্রদান করা হয় ।

অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাকিয়া পারভিন বলেন , “ আমি প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষা নিয়ে কাজ করতেছি প্রায় ৩৯ বছর যাবৎ। আমার কাজটি ছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার ঘটানো ।

এ কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি । অভিভাবক, কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে শেয়ার করে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছি । বর্তমান সরকাররে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক শিক্ষাকে অনেক দূর নিয়ে গিয়েছেন ।

সেই সরকারের এবং এ দেশের একজন সুনাগরিক হিসেবে যেহেতু আমার স্বামী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাই মনে হলো তার জন্য কিছু করি । এ বৃত্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি এবং স্বপ্ন জাগানো । স্বপ্ন জাগাটা হচ্ছে মূল কার্যক্রম ।

আমার চিন্তা হচ্ছে যেহেতু আমাদেও বেশীর ভাগ জনগণ চর এলাকায় বাস করে এবং সেখানকার বেশীরভাগ মানুষই হচ্ছে অশিক্ষিত এবং অসচেতন । এই জনগোষ্ঠীকে চেতনা করার জন্যই মূলত এ কার্যক্রমে আমি হাত দিয়েছি । আমি পর্যায়ক্রমে এই বৃত্তি পরীক্ষা পুরো টাঙ্গাইল জেলায় ছড়িয়ে দিতে চাই । ”

ক্ষুদে পরীক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, “ আমি এ বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পেওে খুবই আনন্দিত । আমার অনেক ভাল লেগেছে । আমি এর আগেও অনেক বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছি । এই বৃত্তি পরীক্ষাতেই প্রথম অংগ্রশগ্রহন করে মেডেল পেয়েছি । এতে আমি খুবই খুশি ।”
জোবায়দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্তী আশরাফুন্নাহার বলেন, “ আমার এই পরীক্ষা দিয়ে অনেক ভাল লেগেছে । আমি পরীক্ষায় সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে পেওে খুব খুশি ।”

টাঙ্গাইল সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম মো. মোশারফ হোসেন বলেন, যার উদ্দেশ্যে আজকে এই বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে সেই মোমিন স্যার অত্যন্ত ভাল লোক ছিল । স্যারের সাথে আমি দীর্ঘদিন কাজ করেছি । স্যার নিজের সন্তানদের ক্ষেত্রে বাবার পাশাপাশি মায়ের ভূমিকাও পালন করেছেন ।

স্যার সোনালী ব্যাংকের একজন দক্ষ এবং সাদা মনের মানুষ ছিলেন । আমরা সোনালী ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা মোমিন স্যার এবং তার পরিবারকে নিয়ে গর্ববোধ করি । স্যারের স্মৃতি চারণে আজকে যে বৃত্তি পরীক্ষা চালু হয়েছে । আমি আশা করবো এ বৃত্তি পরীক্ষা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে । মোমিনুর রহমান বৃত্তি পরীক্ষা শুধু টাঙ্গাইল জেলায় নয় এটা পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাবে এটা আশা করবো ।”

অভিভাবকরা বলেন, আমাদের সন্তানদের এ পরীক্ষায় অংশগ্রহন করার সুযোগ কওে দেওয়ায় জাকিয়া পারভিন ম্যাডামের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ । আমরা আশা করি এ পরীক্ষার ধারাবাহিকতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।