ঢাবি প্রো-ভিসি ও পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে অনঢ় সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাবি প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাকিবের ওপর হামলাকারী পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনঢ় সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে থানা ঘেরাওয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে ঢাকা কলেজের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. মুঈনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, গতকাল সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি নিয়ে গণতন্ত্র ও মুক্তি তোরণের কাছে যায়। কিন্তু তারা গণতন্ত্র মুক্তি তোরণ অতিক্রম করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিতভাবে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এর প্রেক্ষিতে সকালে আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ছয় দফা দাবি পেশ করেছি। তার মধ্যে একটি দাবি ছিল দাবি অধিভুক্তি বাতিল করে স্বতন্ত্র কাঠামোর জন্য কমিশন গঠন করতে হবে। সে দাবি কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়েছে, এর জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমাদের এখনো পাঁচটি দাবি বাকি আছে। এ পাঁচটি দাবিও মানতে হবে।
মো. মুঈনুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানের সম্পূর্ণ দায়ভার ঢাবির প্রো ভিসিকে নিতে হবে। অনতিবিলম্বে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ প্রো ভিসিকে পদত্যাগ করতে হবে। এ দাবিগুলো যদি মেনে না নেয়া হয় তাহলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিউমার্কেট থানায় ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের অভদ্র মহিলাদের কলেজ বলে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে এবং বাজে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করেছে। এর দায় নিয়ে ঢাবি প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে হবে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিটিয়ে নির্মমভাবে আহত করেছে নিউমার্কেট থানা। এ হামলার সঙ্গে জড়িত পুলিশের এসি, ওসিসহ সবাইকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এর আগে আজ দুপুরে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে বৈঠকে সাত কলেজকে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়—
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে এ বছর থেকেই অর্থাৎ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি না নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সভায় জোর সুপারিশ করা হয়।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী আসন সংখ্যা ও ভর্তি ফি নির্ধারণসহ সব বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকছে না সরকারি সাত কলেজ। ২০২৪-২৫ সেশন থেকে ভর্তি পরীক্ষা নেবে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাত কলেজকে নিয়ে উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয় গঠন হবে।
সুত্র:বণিক বার্তা