টাঙ্গাইলে মহাসড়ক অবরোধ, দুইজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত আহত ৫০

টাঙ্গাইলে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে একদফা দাবিতে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে নগরজালফৈ এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে আন্দোলনকারী এবং বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। রোববার (৪ আগস্ট) সকাল ১১ টায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে অবরোধ করে দিনের কর্মসূচি শুরু করে তারা।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলনকারী সঙ্গে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা যোগ দেয়।
রোববার সকাল ১১টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়। সেখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং ছাত্র-জনতার ঢল নামে। অনেকের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে জমায়েতস্থলে হঠাৎ খবর আসে শহরের বটতলায় দুই ছাত্রীকে মারধর করা হয়েছে। এ খবর পেয়ে জমায়েতের লোকজন শহরের বটতলার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যেতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা বটতলাস্থ বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে সেখানে ভাঙচুর চালায়। সেখানে রাখা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের(ভিপি জোয়াহের) ব্যক্তিগত গাড়িতে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়।
পরে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা সদর রোড হয়ে সিঅ্যান্ডবি রোড দিয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত স্থান থেকে কে বা কারা মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলিতে কয়েকজন জন আহত হয়। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি জঙ্গি আকার ধারন করে। পরে জঙ্গি মিছিলটি পুরাতন বাসস্ট্যান্ড হয়ে থানাপাড়া রোডের দিকে যায়। বিক্ষোভকারীরা থানাপাড়ায় জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনিরের চারতলা ভবনে হামলা চালিয়ে প্রথমে ব্যাপক ভাঙচুর ও পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ফায়ারসার্ভিসে ফোন করা হলেও তারা আসতে পারেনি। পরে আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের দিকে চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এরপর বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে পুনরায় বাসস্ট্যান্ড হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের দিকে যাওয়ার সময় আবারও অজ্ঞাত স্থান থেকে কে বা কারা গুলি চালায়। এতেও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধসহ আন্দোলনকারীদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অত:পর বিক্ষোভকারীরা বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের নগরজালফৈ এলাকায় গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। মিছিলকারীরা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ এবং ‘ভুয়া ভুয়া সহ সরকার বিরোধী নানা ধরনের স্লোগান দেয়। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা আশেকপুর এলাকায় এমপি তানভীর হাসান ছোট মনিরের মালিকানাধীন ‘দি টাঙ্গাইল মডেল পাম্প অ্যান্ড ধ্রুব রেস্টুরেণ্ট’ নামীয় পেট্রোল পাম্পে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এদিন দুপুর ২টার পর আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক ছেড়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে শহরের দিকে চলে যাওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিন বিকাল পৌণে তিনটার দিকে একটি বড় বিক্ষোভ মিছিল আদালত চত্ত্বরের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আদালত চত্ত্বরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ২-৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে। এতে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিলটি পিছু হটে নিরালামোড়ের দিকে যাওয়ার সময় বটতলাস্থ ‘রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও আশ্রমে’ ভাঙচুর চালায়। এরপর নিরালা মোড়ে এসে বন্ধ থাকা দোকানপাটে হামলা ও ভাঙ্গচুর এবং টাঙ্গাইল পৌরসভার ভবন ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যলয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এদিকে, আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল ও বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শহরের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। এদিন বিকাল চারটার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছিল।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপরাধ) মো. শরফুদ্দিন জানান, একটি বিক্ষোভ মিছিল আদালত চত্ত্বরের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ ২-৩টি টিয়ার শেল ছুড়ে মিছিলটি ফিরিয়ে দেয়। অন্য কোথাও পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি। আন্দোলনকারীরা নিবির্ঘ্নে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তবে জনসাধারণের জান-মাল রক্ষায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী শহরে টহল দিচ্ছে।