নাটোরের বড়াইগ্রামে ইনডোর গেমের নামে জুয়া

মাইকের তীব্র শব্দে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্নতা

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬:৪৭ পিএম, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০১৮ | ৫৭০

নাটোরের বড়াইগ্রামে গ্রামীণ যাত্রাপালা ও আদালত থেকে নিয়ে আসা ইনডোর গেমের নামে অবৈধভাবে চলছে রমরমা জুয়া আর অশ্লীল নাচ-গান। এছাড়াও যাত্রা ও অশ্লীল গান চালাতে ব্যাবহার করা হচ্ছে অসংখ্য বড় বড় মাইক। মাইকের তীব্র শব্দে আগামী ১ফেব্র“য়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় চরম অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি অতি লোভে জুয়ার আসরে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজার-হাজার মানুষ।

এর ফলে এলাকায় ছিচকে চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু রাতের অন্ধকারেই নয় এখন দিনে দুপুরেও এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে এমন কর্মকান্ড চালালেও প্রশাসন রয়েছে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। উচ্চ আদালতের অনুমতি থাকায় তাদের এই নিরবতা বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলার বনপাড়া বাইপাস মোড়ে এই ইনডোর গেমের নামে জনৈক এনামুল হক চালিয়ে যাচ্ছেন এই রমরাম জুয়া আর অশ্লীল নাচ-গানের আসর। এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে সচেতন মহল তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার স্বার্থে এই ক্ষতিকারক মেলা বন্ধে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হক্ষক্ষেপ কামনা করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উচ্চ আদালত থেকে ইনডোর গেম ও গ্রামীণ যাত্রা পালার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আর এই অনুমতির বলে তিনি র‌্যাফেল ড্র-এর নামে শতাধিক ভ্যান, অটোরিক্সায় মাইক টাঙ্গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে লোভনীয় উপহারের ঘোষণা দিয়ে ২০ টাকা করে প্রতিটি টিকেট বিক্রি করছেন। লটারী বিক্রি উপজেলার সীমা ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী লালপুর, বাগাতিপাড়া, গুরুদাসপুর, পাবনার, ঈশ্বরদী, চাটমোহর উপজেলায় পৌঁছে গেছে। শুধু তাই নয় এই অনুমতির বলে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মেলার প্যান্ডেলে হাউজি খেলা শুরু হয়।

এছাড়াও রাত বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় ডাব্বু, তাসসহ বিভিন্ন প্রকার জুয়ার আসর। চলতে থাকে রাত ১২টার পরে গ্রামীণ যাত্রাপালার নামে অশ্লীল নৃত্য। স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকছেন। ফলে জুয়ার আসরে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে হাজার-হাজার মানুষ। এর ফলে এলাকায় ছিচকে চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু রাতের অন্ধকারেই নয় এখন দিনে দুপুরেও এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও যাত্রা ও অশ্লীল গান চালাতে ব্যাবহার করা হচ্ছে অসংখ্য বড় বড় মাইক। এতে করে মাইকের তীব্র শব্দে আগামী ১ ফেব্র“য়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটছে।

এসএসসি পরীক্ষার্থী তারেক আহম্মেদ জানায়, মেলার মাইকের শব্দের কারণে সে ঠিকমতো পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছেনা। এতে তার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয় রাতের বেলা এমন শব্দের কারণে কেউ সঠিকভাবে ঘুমাতেও পারছেন না। এভাবে চলতে থাকলে তারা অসুস্থ্য হয়ে পরবে বলে মনে করেন।

উপজেলার কালিকাপুর এলাকার ভ্যান চালক আসাদ মিয়া বলেন, সারাদিন ভ্যান চালিয়ে মাত্র দুইশ টাকা রোজগার করেছিলেন তিনি। তিনি ভেবেছিলেন ১০টা টিকেট কিনে যদি একটি মোটরসাইকেল পাওয়া যায় তাহলে মন্দ কি। এই ভেবেই তিনি তার রোজগারের দুইশ টাকা দিয়ে ১০টি লটারির টিকিট ক্রয় করে মেলার মাঠেই বসে থাকেন লটারি ড্র হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু ফলাফল শূন্য, একটি টিকিটেও তার মোটরসাইকেলের নম্বর ওঠেনি। এদিকে সারাদিনের রোজগারের অর্থ দিয়ে টিকিট কিনার ফলে পরিবারের সদস্যদের জন্য চাল-ডালও কেনা হলো না তার।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জব্বার মোল্লা জানান, তার কাছে কাজ করা শ্রমিকরা সন্ধ্যার পর আর দোকানে কাজ করতে চায়না। কোন রকমে তাদের আটকিয়ে রাখলেও দোকান বন্ধের পর তারা চলে যায় জুয়ার মাঠে। সারাদিনের আয় রোজগার সব ঢেলে দিয়ে আসে জুয়ার পিছনে। তাদের মতো খেটে খাওয়া দরিদ্র শ্রেণীর মানুষই বেশী কিনছে লটারী। কিছুই না পেয়ে না পেয়ে শুন্যহাতে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে মেলার আয়োজক এনামুল হকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাম্ভিকতার সাথে বলেন, সাংবাদিকের চোখে সবই অবৈধ। তারা ভাল কিছুই দেখতে পায় না। উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে মেলা চালানো হচ্ছে, এটা চলবে।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহরিয়ার খান বলেন, মেলার আয়োজকের পক্ষ থেকে তাদের হাতে উচ্চ আদালতের অর্ডারের কপি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তারা এ বিষয়ে অসহায়। আরও কিছু জানতে চাইলে তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। মেলার বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে বড়াইগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ বলেন, আদালতের আদেশ থাকায় তারা এব্যাপারে কিছু করতে পারছেন না। তবে এসএসসি পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে মেলাটি বন্ধের জন্য আয়োজককে বলা হয়েছে।