মধুপুরে বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬:২১ পিএম, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২ | ৩৫৩

টাঙ্গাইলের মধুপুরে বৃদ্ধি পেয়েছে গোখাদ্য খড়ের দাম। ত্রিমুখী চাহিদার কারণে এ দাম  বেড়েছে বলে জানা গেছে। এতে খরচ বেশী লাগছে গরুর খামারীদের।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি আঁটি খড় দশ-বারো টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে তা বিক্রি হতো চার-পাঁচ টাকায়।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জানান,মধুপুরে বর্তমান আমন মৌসুমে প্রায় ৬৩ হাজার ৫৯২ মেট্রিক টন খড় উৎপাদিত হয়েছে। এই খড় দিয়েই গবাদিপশুর খাবার চাহিদা পূরণ সম্ভব ছিল। কিন্তু আনারসের ফলন রক্ষায় এবার প্রয়োজন হবে বেশি খড়ের। কারণ, এ বছর জেলায় আনারসের আবাদ বেড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে তাই এবার খড়ের চাহিদা বেশি। সে জন্য খড় কেনার ঝোঁক বেড়েছে চাষি ও খামারিদের মধ্যে।

অপরদিকে সমতল ভূমির গৃহস্থদের সবুজ ঘাসের অভাব রয়েছে। ফলে তাঁদের খড়ের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয়ে। তাই এ বছর খড় কিনতে গৃহস্থদেরও বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১ হাজার ৭৬৬ টি গরুর খামার রয়েছে।

এ ছাড়া গৃহস্থরা গবাদিপশু পালন করে থাকেন। সব মিলিয়ে গরুর সংখ্যা ৯৭ হাজারের বেশী। অন্যদিকে মহিষ রয়েছে ২ হাজার ৫৫ টি। প্রতিটি গরুর প্রতিদিন ২ কেজি খড় ও ৫ কেজি ঘাসের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী প্রতিবছর এসব গবাদিপশুর জন্য ৭১ হাজার ২২৬ মেট্রিক টন খড় প্রয়োজন। ঘাস প্রয়োজন হয় ১৭ কোটি ৮০ লাখ ৬৫ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর আনারসের আবাদ হয়েছিল  ৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে।

চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যে ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। অনেকে এখনো আনারসের চারা রোপণে ব্যস্ত। আনারস বাগানে ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে ব্যাপক খড়ের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি আনারসকে রোদের উত্তাপ থেকে রক্ষা করতে খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। সে জন্য প্রচুর পরিমাণে খড়ের প্রয়োজন হয়। সেই চাহিদা মেটাতে এখনই চাষীরা বাড়ী বাড়ী ঘুরে খড় সংগ্রহ করছেন।  

গোলাবাড়ী  গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, ‘আমি ধান কাটার আগেই খড় বিক্রি করে দিয়েছি। দুই বিঘা জমির খড় বিক্রি করেছি সাত হাজার টাকায়।’ একই গ্রামের আখের আলী তাঁর খেতের ধান কেটেছেন টাকা ছাড়াই। যাঁদের খড় প্রয়োজন, তারাই ৬০০ টাকা করে প্রতিজন শ্রমিক এনে ধান কেটে মাড়াই করে খড় নিয়ে  গেছেন। এখনো বাড়ী বাড়ী ঘুরে খড় কিনে নিচ্ছেন গৃহস্থ ও আনারস সহ কলা চাষীরা। এদিকে খড়ের এই চাহিদার ফলে গরুর খামারীদের ব্যয় বেড়ে গেছে। খড় সংকটও দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষক হাবিবুর রহমান সহ অনেকেই।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, মধুপুরে গোখাদ্যের সংকট মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারবে। পাহাড়ী অঞ্চলের মানুষ প্রাকৃতিকভাবেই গোখাদ্য মেটানোর চেষ্টা করেন। তবে সমতল ভূমির মানুষ খড়ের ওপর নির্ভরশীল। তাঁরা আমন ও  বোরো মৌসুমে খড় কিনে তাঁদের চাহিদা পূরণ করেন। এ বছর আনারসের  আবাদ বাড়ায় খড়ের একটু চাহিদা বাড়লেও কৃষকেরা তাঁদের খড়ের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।