প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার সানির লক্ষ্য বড় ক্রিকেটার হওয়া


ক্রিকেট খেলার বড় সৌন্দর্য বড় বড় চার ছক্কা। দর্শকের চাহিদা থাকে চার ছক্কা মার। তবে চার ছক্কার মাঝেও অন্যরকম দৃশ্য দেখতে ভালো লাগে। সেটা হলো গতিময় বোলিং নয়, স্লো বোলিংয়ের মাঝে ভেরিয়েশন। অপস্পিন, লেগস্পিন! এটা আবার কেমন বোলিং? এটাকে বলা যায় সোজা নয়, ঘুর্নি বোলিং। স্লো বোলিংয়ের মাঝে ব্যাটসম্যানকে চার ছক্কার মারার আহবান জানিয়ে ব্যাটসম্যানের উইকেট দখল করা। এই ধরনের বোলিং একমাত্র লেগস্পিনেই সম্ভব। সেটা টাঙ্গাইলের সম্ভাবনাময় তরুণ ক্রিকেটার নাসিউল হক সানির বেলায় সম্ভব। কারণ সে বিশ্ববিখ্যাত শেনওয়ার্ন, অনিল কুম্বলে ও সাকিব আল হাসানের মতো লেগস্পিন বোলিং করে থাকে।
ক্রিকেটার নাসিউল হক সানি সেই ছোট্রবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি অগাধ ভালবাসা থেকে নিজেকে ক্রিকেটার হিসেবে তৈরী করেছে। ব্যাটসম্যান না হয়ে হতে চেয়েছেন শেনওয়ার্ন কিংবা সাকিব আল হাসানের মতো লেগস্পিনার। যদিও সে ধুমধারাক্কা বাহাতি ব্যাটিংও করতে পারে। তাকে অনেক ম্যাচেই পিঞ্চহিটার হিসেবে ওপেনার হিসেবে খেলতে দেখা গেছে। বাবা সাংবাদিক, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের যুগ্ন-সম্পাদক ও জেলা টেলিভিশন রিপোর্টাস ফোরামের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন। মা গৃহিনী সাথী আক্তার। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে সানির বাবা ও মা’র। যে কারনে দুই ছেলের মাঝে তারা স্বপ্ন দেখে তাদের বড় ছেলে সানির মাঝে। সানির জন্ম ২০০০ সালের ১৫ ডিসেম্বর। ইংরেজি ভার্সন স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ার সময় ৫ বছর বয়স থেকেই বাবা-মা’র উৎসাহে ক্রিকেট শেখায় এগিয়ে যায় নাসিউল হক সানি। টাঙ্গাইল সদরের বাগানবাড়ী এলাকায় বসবাস করে টাঙ্গাইল জেলা কোচ আরাফাত রহমানের অধীনে ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন।
সাংবাদিক বাবা নাসির উদ্দিন তার হাজারো ব্যস্ততার মাঝে ছেলে নিয়ে মাঠে সময় দিতেন। ছেলের খেলা উপভোগ করতেন আর উৎসাহ দিতেন। সানি তার লেগস্পিন বোলিং দিয়ে শুরু থেকে বিভিন্ন মাঠে সবার নজর কেড়েছেন। সুযোগ করে নিয়েছেন বয়স ভিত্তিক জেলা ও বিভাগীয় দলে। টাঙ্গাইল জেলার অনুর্দ্ধ ১৪, ১৬ ও ১৮ ক্রিকেট দলের নিয়মিত পারফরমার। এর মধ্যে স্বরনীয় হয়ে আছে ২০১৬ সালে ঢাকা বিভাগীয় দলে খেলে রানার্সআপ দলের সদস্য হওয়া।
২০১৭ সালে প্রাইম ব্যাংক ইয়ং টাইগার্স জাতীয় ক্রিকেট বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় বিবেকান্দ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ দলের পক্ষে ৫টি ইউকেট নিয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ নির্বাচিত হন সানি। একই টুর্ণামেন্টে ফাইনাল খেলায়ও সানি ম্যান অব দা ম্যাচ নির্বাচিত হয়।
২০১৮-১৯ সালে ইয়ং টাইগার্স অনুর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় টাঙ্গাইল জেলা অনুর্ধ্ব-১৮ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে। ২০১৮ সালে ঢাকা সিটি ইউনিভার্সিতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের দল শেখ জামাল ক্লাবে নতুন খেলোয়াড় হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলো। বর্তমানে খেলেন ঢাকা ধানমন্ডি প্রগতি সংঘে। খেলেছেন ২০১৬ সালে ঢাকার কামরাঙ্গীর চর ক্লাবে। টাঙ্গাইল জেলার প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে ২০১৫ থেকে খেলেছেন স্কয়ার ক্লাবে এবং ২০১৮ সালে ইস্টার্ন স্পোটিং ক্লাবে। তার জীবনের স্বরনীয় খেলা ২০১৪ সালে মানিকগঞ্জ স্টেডিয়ামে তার দল সেমিফাইনালে ১রানের ব্যবধানে হেরে গেলেও অলরাউন্ড পারফরমেন্স করায় ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছিলেন।
মহামারী করোনার কারণে খেলা বন্ধ থাকলে সানি নিজেকে গড়ে তুলতে নিয়মিত একাকী প্র্যাকটিস করেছেন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলেন শক্তিশালী দল ভিপি জোয়াহের ভাইকিংস দলে। কোচ হিসেবে তার পছন্দ টাঙ্গাইল জেলা কোচ মোঃ আরাফাত রহমান এবং অধিনায়ক আদনান খান। সবার মতো সানির জীবনের লক্ষ্য বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার হওয়া। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করা সানির অবসর কাটে প্রিয় মানুষদের সঙ্গে। তার মতে টাঙ্গাইলে যদি নিয়মিত ক্রিকেট খেলা হয় তাহলে টাঙ্গাইলের ক্রিকেট অনেক এগিয়ে যাবে। অনেক ক্রিকেটার বের হয়ে আসবে। হয়ত তাদের মাঝ থেকেই কেউ হয়ত বাংলাদেশ জাতীয় দলে সুযোগ পেতে পারেন।