ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তান-এর টাঙ্গাইল শাখা?


স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তান এর টাঙ্গাইল শাখাটি রয়ে গেছে। টাঙ্গাইলের সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় ব্যাংকের দুটি নামকরণ দেখা যায়। একটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তান, অপরটি বর্তমান সোনালী ব্যাংক।
ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অর্থ মন্ত্রী ড. মির্জা নূরুল হুদা ১৯৬৮ সালের ১৮ মে ব্যাংকের টাঙ্গাইলের এই শাখাটি উদ্বোধন করেন। এরপর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রূপ লাভ করে বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (ব্যাংক) অব পাকিস্তান এর টাঙ্গাইল শাখাটি রয়ে গেছে।
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত হয়। এরপর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তারপর দেশের সকল ব্যক্তিগত, স্বায়ত্বশাষিত বা রাষ্ট্রায়ত্ব সকল প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ব্যাংক অব বাহাওয়ালপুরকে অধিগ্রহণ করে সোনালী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান বাংলাদেশ বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিলুপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও এখন টাঙ্গাইলে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান-এর টাঙ্গাইল শাখাটি এখনো আছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও এই নাম ফলকটি পরিবর্তন বা সরিয়ে ফেলতে পারেনি সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
বিগত ২৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে প্রথম নজরে আসলে সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন ডিজিএম নুর মোহাম্মদকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তিনি সাথে সাথেই সেটিকে একটি কাগজ দিয়ে ঢেকে দেন এবং বলেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত নামফলকটি উঠিয়ে ফেলার ব্যবস্থা নেয়া হবে। যা দেড় বছরেও অপসারণ করা বা স্থায়ী ভাবে ঢেকে দেয়া হয় নাই।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডিপুটি কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৬ বছরে পদার্পন করেছি। এখানে আমার প্রশ্ন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এখনো পাকিস্তানের ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের শাখা সোনালী ব্যাংক থাকে কিভাবে? ব্যাংকের প্রধান কর্মকর্তাদের কাছে আমার জানতে ইচ্ছে করছে, টাঙ্গাইলের মত কি সারা বাংলাদেশেই ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের শাখা রয়েছে কিনা যেটাকে আমরা সোনালী ব্যাংক হিসেবে আমরা চিনি। আজকে আমি বলতে চাই, এই ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তান এর নাম ফলকটি যদি দ্রুত অপসারণ করা না হয়, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। প্রয়োজনে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এটিকে প্রতিহত করব।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনিসুর রহমান (দাদু ভাই) বলেন, টাঙ্গাইল সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের উদ্বোধনী ফলকটি এখনো বিদ্যামান। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটি আমি মেনে নিতে পারি না। আমি সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে আমি জানতে চাই, কিভাবে, কি কারণে এই নাম ফলটি এতদিন রয়েছে? তিনি আরো জানতে চেয়ে বলেন, এটি কি ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের টাঙ্গাইল শাখা নাকি সোনালী ব্যাংক টাঙ্গাইলের প্রধান শাখা?
নামফলকটির বিষয়ে বর্তমান ডিজিএম মো. মুশাররফ হোসেন বলেন, এটিকে আমরা এখনই বোর্ড দিয়ে ঢেকে দিব। পরে অফিশিয়াল আদেশ তৈরি করে এটাকে অপসারণ করে ফেলা হবে।
এবিষয়ে সোনালী ব্যাংকের পরিচালক মো. নূরুল আলম তালুকদার বলেন, বিষয়টি আমাদের দৃষ্টি গোচরে ছিল না, আমরা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অফিসিয়ালি বিষয়টা সমাধান করে ফেলব।