ঝি’এর কাজ করে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর জীবিকানির্বাহ

রুবেল ইসলাম,রংপুর
প্রকাশিত: ০৩:০৫ পিএম, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৫৭৭

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজের জীবন বাজি রেখে দেশকে হানাদারমুক্ত করেছেন এবং স্বাধীনতার পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র ও সম্মান।

কিন্তু  মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসাবে যতটুকু সম্মান পাওয়ার যোগ্য তার চিহ্ন পরিমাণ সম্মান পাচ্ছেন না পাশাপাশি ঝি’এর কাজ করে জীবিকানির্বাহ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধা মৃত আঃ মজিদ(কাঞ্চিয়া)এর  দ্বিতীয় স্ত্রী জরিনা বেগম।

রংপুরে মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের দেউলপাড়া গ্রামের মৃত কেরামত শেখ এর পুত্র মৃত আব্দুল মজিদ(মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং-৪৩৫) একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ০৪-০৩-১৪১০বাং(১৮-০৬-২০০৩ইং)তাকে সাময়িক সনদপত্র প্রদান করেন যাহার স্মারক নং-মুক্তি/সা/রংপুর/১৬-৩/৪০/২০০২/৩১০।

স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে পরপর তিনটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর দুইটি সন্তান,দ্বিতীয় স্ত্রীর একটি সন্তান ও তৃতীয় স্ত্রীর দুইটি সন্তান রয়েছে। প্রথম ও তৃতীয় স্ত্রীর স্বামীর বাসায় স্থান হলেও দ্বিতীয় স্ত্রীর স্বামীর বাসভবনে স্থান হয়নি ।

স্বামীর বাসায় স্থান না হওয়ায় পাশ্ববর্তী ইমাদপুর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া ফরিদপুরে পরের জমিতে বাঁশ তলায় ছোট্ট একটি বাঁশের চালা তুলে বসবাস ও পরের বাড়িতে কিংবা এতিম খানায় ঝি-এর কাজ করে সংসার জীবিকা নির্বাহ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। 

মুক্তিযোদ্ধা মৃত আঃ মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জরিনা বেগমের সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান- ১২ বছর পূর্বে তার স্বামী মারা গেলে স্বামীর বাসা থেকে তিনি চলে আসেন।

মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণের জন্য তিনি অনেক চেষ্টা করেও ভাতা পাননি বরং অভিযোগ করেন আমার স্বামীর ছাড়ি দেওয়া বউয়ের নামে ভাতা হয়েছে কিন্তু আমার হয়নি! মানুষের বাসায় থাকি আর কাজ করি কোনো বেলা খাবার জোটে আবার কোনো বেলা জোটে না অবশেষে এখানে এতিম খানায় রান্নার কাজ করেন সকালে ও সন্ধ্যায় সেখান থেকে যাহা ভাত পায় তাই খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

ভাতার জন্য বিভিন্ন অফিসে গিয়েছিলেন তিনি এবং কষ্টের অনেক টাকা খরচ করেছেন তবুও ভাতা হয়নি তবে তার পত্মীছাড়া মেয়ে সেতারা ঢাকায় টাকা পয়সা খরচ করে নিজের  নামে ভাতার কার্ড করছে।

তিনি কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন-সরকার যদি আমার  একন্যা ভাতার কার্ড করি দেয় শেষ জীবনে কাজ না করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারতাম,এই বয়সে কাজ করা আর ভালো লাগেনা,কাজ করা ছাড়া মানুষ এমনি খাবার দেয়না।

জরিনা বেগমের মেয়ে সেতারার সাথে কথা হলে তিনি জানান-  মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও চাকুরীর জন্য সকলের দ্বারে দ্বারে গুরছি কিন্তু লাভ হয়নি,অনেক টাকা কষ্ট করে আয় করে ব্যয় করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। 

অবশেষে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে কাজ করে টাকা পয়সা দিয়ে কার্ড করি নিছি। একটা চাকুরীর জন্য কতজায়গায় গেছি তার হিসেব নেই।

তিনি আক্ষেপ করে আরোও বলেন-অন্তত কোন একটি অফিসে যদি ঝাড়–দারের চাকুরী পেতাম তাও হতো! আমার স্বামী নেই বর্তমানে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ বহন এবং মাকে নিয়ে একই বাড়িতে পরের জায়গায় চালা তুলে আছি।ঝড়-বৃষ্টি হলে অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়।

মাত্র ৩৩৩৩/-(তিনহাজার তিনশত তেত্রিশ) টাকায় কি সংসার চলে? সরকার যাদের বাড়িঘর কিংবা জমি নেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করছেন। যদি আমাদের জন্য একটু ব্যবস্থা করে দিতেন।

মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও কন্যা দুজনেই বিজয়ের মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।