ঘূর্নিঝড় ‘বুলবুল’র আশঙ্কা নেই কক্সবাজারে

সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছে সহস্রাধিক পর্যটক

এম,জুনাইদ উদ্দিন ,কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৫:৪৩ পিএম, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০১৯ | ৬১৬
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে কক্সবাজারে আঘাত হানার কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে ৪নং স্থানীয় হুশিয়ারী সংকেত এবং মোংলা, খুলনা ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ১০নং মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
 
‘বুলবুল’র প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া এক হাজারের বেশি পর্যটক আটকা পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর প্রভাবে শনিবার সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকালে মেঘলা না থাকলেও গুমোট হয়েছে আকাশ। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি সাগর স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা উত্তাল রয়েছে।
 
শনিবার ৯ নভেম্বর বিকেল ৩টায় কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের প্রধান ও সহকারি আবহাওয়াবিদ মোঃ আবদুর রহমান রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ বঙ্গোপসাগরের উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজ রাতের মধ্যে সুন্দরবন, পায়রা ও খুলনার দিকে আঘাত আনতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর ৭৪ কি: মি: এর মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১৩৫ কি: মি: থেকে ১৫৫ কি:মি: পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
 
কক্সবাজারবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান। কক্সবাজার সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দূর্বল হয়ে পড়েছে। এরপরও সবধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সর্তক জারি করেছেন। শনিবার জেলা প্রশাসকের আয়োজনে ডিসি সাহেবের বলিখেলা ও জেলা ইজতেমা সংক্ষিপ্ত করে সমাপ্ত করেছেন। এছাড়াও প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সবধরণের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ে দফা দফায় বৈঠক করেছেন। সবধরণের ক্ষতি মোকাবেলার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
 
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় “বুলবুল” এর সম্ভাব্য আঘাত থেকে রক্ষা পেতে সকল আশ্রয় কেন্দ্র গুলো খোলা রাখার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও শিক্ষা অফিসারগণকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, নগদ অর্থ সাহায্য ও চালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইউএনও আরও বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের নেতৃত্বে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে টিম গঠন করা হয়েছে। একই সাথে কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স, এ্যাম্বুলেন্স, ইমার্জেন্সি মেডিকেল টিম, জরুরী ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
 
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ প্রভাবে সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার কারণে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া এক হাজারের বেশি পর্যটক আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
 
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-পথে পর্যটকবাহী জাহাজসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
ফলে বৃহস্পতিবার ও এর আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া অন্তত এক সহস্রাধিক পর্যটক সেখানে আটকা পড়েছেন।
মৌসুমী আবহাওয়ার কারণে গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি এখন নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে আবাহওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন।
 
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে চলাচলকারি নৌযান সমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
 
আব্দুর রহমান বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল থেকে ৭১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এটি শনিবার রাতে বা পরদিন সকালে বাংলাদেশের উত্তরও-পশ্চিম উপকূল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।”
 
এসময় বাতাসের ঘন্টায় ৯০-১১০ কিলোমিটার গতিবেগের ধমকা ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি দেশের উপকূলজুড়ে হালকা-মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
 
ইউএনও বলেন,“টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চলতি পর্যটন মৌসুমে চারটি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করছে। এসব জাহাজে করে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেড়াতে গিয়েছিল। এছাড়া অন্যান্য নৌযান ও চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অন্তত আট শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দারাও টেকনাফ থেকে ফিরতে পারেননি। ”
 
এছাড়া আটকা পড়া পর্যটকদের যাতে কোন ধরণের অসুবিধা ও দুর্ভোগে পড়তে না হয়- এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে আটকা পড়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান সাইফুল ইসলাম।
সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, শুক্রবার সকালে আটকা পড়া পর্যটক এবং হোটেল-মোটেগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। এসব পর্যটকদের কাছ থেকে হোটেল কক্ষের নির্ধারিত মূল্যের অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁ গুলোকেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
 
তবে আটকা পড়া পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে নিরাপদে অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলায় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলোকে উপকূলে ফিরে আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান।
 
তিনি বলেন, “এনিয়ে শুক্রবার সকালের মধ্যে অধিকাংশ ট্রলার উপকূলে ফিরে এসেছে। এখনো সাগরে ৫ শতাধিক মাছ ধরার ট্রলার অবস্থান করছে