দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খ্যাতি অর্জন করেছে ঠাকুরগাঁওয়ের লাউ

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৬:৩৫ পিএম, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৭ | ৪৭৮

ঠাকুরগাঁওয়ের কচি ও সুস্বাদু লাউয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। প্রতিদিনই কৃষকের কাছ থেকে লাউ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ সুবাদে এলাকার কৃষকরাও লাউ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন।

জেলার সবজি উৎপাদনে খ্যাত সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের কেরানীর হাটে গেলে দেখা যায় সেখানে প্রতিদিনই সকাল থেকে শুরু করে দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পাইকার, স্থানীয় ফরিয়া, শ্রমিক, গৃহস্থ মিলে এক জমজমাট বিকিকিনির হাট।

জেলার নারগুন, নিশ্চিন্তপুর, শীবগঞ্জ, মোহাম্মদপুর, কহরপাড়া, টেকাবাড়ি, খোচাবাড়ি এলাকা থেকে ইজিবাইক, রিক্সা ভ্যান যোগে নিজেদের জমির লাউ নিয়ে হাজির হচ্ছেন গৃহস্থরা। এখানে লাউকে প্রথমে গ্রেডেশন করা হয়। সাধারণত তিন গ্রেডে লাউ বাছাই করা হয়। খুব ভালো, ভালো এবং চলনসই। এরমধ্যে খুব ভালো বা ‘এ’ গ্রেডের লাউ উচ্চমূল্যে কিনে নেন পাইকাররা।

এর প্রতিটি লাউ বিক্রি হয় ২৮/৩০ টাকায় । এরপর ভালো বা ‘বি’ গ্রেডেরগুলো সাধারণত স্থানীয় বাজারের পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। তবে বাইরে মালের টান থাকলে এগুলোও চলে যায়। এগুলো বিক্রি হয় প্রতিটি ২০-২৫ টাকায়। ‘সি’ গ্রেডের লাউ অধিকাংশই স্থানীয় আড়তে চলে যায়। এগুলোর দামও অপেক্ষাকৃত কম। প্রতিটি লাউ বিক্রি হয় ১০-১৫ টাকায়।

কথা হয় নোয়াখালী থেকে লাউ কিনতে আসা খোরসেদ আলমের সাথে। তিনি জানান, এখান থেকে লাউ ট্রাকে লোড দেয়ার পর যেখানে ‘মালের টান’ থাকে সেখানেই নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকার কারওয়ার বাজার থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালীতে লাউয়ের দাম বেশি পাওয়া যায় বলে খোরসেদ আলম জানান।

ছোট একটি ট্রাকের ভাড়া ১২ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা ও বড় ট্রাকের ভাড়া ২০/২২ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি ট্রাকে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ৭ হাজার পর্যন্ত লাউ লোড দেয়া যায়।

কেরানীর হাটে স্থানীয় আকতারুল, আনছারুল, জিয়ারুল, আমিনুল, আয়ুব, গণি, সাইফুল কৃষকদের জমি থেকে লাউ কেরানীর হাট পর্যন্ত আনা পর্যন্ত যাবতীয় কাজ এবং কেরানীর হাটে আসার পর ট্রাক লোডিং, প্যাকিংয়ের কাজটি করে থাকেন। এর জন্য তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটা কমিশন পেয়ে থাকেন। এখানেই কথা হয় গৃহস্থ কবির আলমগীরের সাথে।

তিনি এবার দেড় বিঘা জমিতে লাউ আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে ৪০ হাজার টাকা। বাজার এমন থাকলে লাউ বিক্রি লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি। এসময় আরো দু একজন গৃহস্থের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে মাত্র ৪ মাসের ফসল লাউ আবাদ করলে ঝামেলা কম, লাভও বেশি।

তারা বলেন, লাউ আবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়না বললেই চলে। মূলত জৈব সারটাই এখানে বেশি ব্যবহার হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কে, এম মাউদুদুল ইসলাম জানান, চলতি বছরে ঠাকুরগাঁওয়ে ৬,১৬০ হেক্টরে সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সম্ভবত প্রায় এক হাজার একরে আবাদ হয়েছে লাউয়ের।

কৃষকরা বাণিজ্যিক ভাবে উন্নত হাইব্রীড জাতের লাউ চাষ করছেন। এছাড়া বাসা বাড়িতে কিছু স্থানীয় জাতের লাউও চাষ করা হয়। লাউয়ের পাশাপাশি কৃষকদের কাছ থেকে করলা, চিচিঙ্গা, বরবটি, মুলা কিনে নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ঠাকুরগাঁওয়ের লাউ দেখতে সুন্দর আকৃতির, খেতেও সুস্বাদু। একারণে বাইরের জেলাগুলোতে খুব চাহিদা এমনটিই বললেন লাউ কিনতে আসা ব্যবসায়ীরা।

লাউ উৎপাদনে কৃষি বিভাগের সঠিক দিক নির্দেশনা এবং পুঁজি পেলে ঠাকুরগাঁওয়ের লাউ সারা দেশেই ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব বলে মনে করেন এলাকার সাধারণ কৃষক।