৩৭ বছরেও সম্প্রসারিত হয়নি টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনাল

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:০০ এএম, শনিবার, ১৭ আগস্ট ২০১৯ | ৩৮৯

৩৭ বছরে যান-বাহন ৪ গুন বাড়লেও সম্প্রসারিত হয়নি টাঙ্গাইল নতুন টার্মিনাল। ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রী সাধারন ও টার্মিনাল সংলগ্ন দেওলা, কোদালিয়া ও সাবালিয়ার এলাকাবাসীর। এই টার্মিনাল লাগোয়া টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনালের হাসপাতাল এ সেবা নিতে আসা রুগী ও তার আত্মীয় স্বজনদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে এই টার্মিনালের জন্য।

জানা যায়, ১৯৮১ সালে টাঙ্গাইল-ময়মেনসিংহ সড়কের দেওলা এলাকায় ৩ একর জায়গার উপর এই টার্মিনালটি স্থাপন করা হয়। সে সময় এটার অবস্থান ছিল শহর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে। বর্তমানে শহর সম্প্রসারিত হয়ে এর আশে পাশে ঘন বসতি গড়ে উঠেছে।

এ ছাড়া শেখ হাসিনার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নতুন ভবন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এই মেডিকেল কলেজ পুরোপুরি চালু হলে হাসাপাতাল মুখী যে জন¯্রােত তৈরি হবে তখন টার্মিনালের কারনে জনদূভোগ চরম আকার ধারন করবে । এ ছাড়া দ্রুত গতির যান-বাহনের কারনে রাস্তা পার হয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করাও দুরহ হয়ে পড়বে।

মালিক ও শ্রমিক সুত্রে জানা যায়, যখনএই বাস টামিনাল যাত্রা শুরু করে তখন বাসের সংখ্যা ছিল ২৫০টি । বর্তমানে বাস-মিনিবাস রয়েছে ১০০০ হাজারেও বেশী। ফলে গত ৪ দশকে গাড়ীর সংখ্যা ৪ গুন বৃদ্ধি পেলেও টার্মিনাল এর জায়গা বাড়েনি এক শতাংশও।বরং সম্প্রতি টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ টার্মিনালের পাশে ১.৩৩ একর জায়গায় একটি বহুতল বানিজ্যিক ভবন “বির্বতন” তৈরি করছে।

যেখানে আগে বেশ কিছু বাস-মিনি বাস রাখা হতো। এ ছাড়া টার্মিনাল ভবনের দু’পাশেই পৌর মার্কেট হওয়াতে দোকান গুলোর সামনে বাস দাড়াতে দেয় না বলে জানা গেছে। এই টার্মিনালের রাস্তার পূর্ব পাশেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল কারী বাস কাউন্টার । এ কাউন্টার গুলো আগে ছিল না । এই সব পরিবহনের বাসগুলো প্রায় সময়ই বাস স্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে রাস্তার উপর রাখা হয়। ফলে প্রতিনিয়ত সাধারন যাত্রী ও আশে পাশে বসবাসরত এলাকাবাসীর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে রুগী পরিবহনের এ্যাম্বুলেন্স যাতায়াতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে । ক্ষেত্র বিশেষে এই সব এ্যাম্বুলেন্সকে দীর্ঘক্ষন ধরে অপেক্ষা করতে হয় নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকা পার হতে।

এ প্রসঙ্গে ঘাটাইল থেকে রুগী বহন করা এ্যাম্বুলেস চালক আঃ আলিম জানান, প্রতি দিন রুগী নিয়ে এসে আমাদের এই ভাবে দাঁডিয়ে থাকতে হয় টার্মিনালে যান জটের কারনে। বিশেষ করে টাঙ্গাইলের উত্তরাঞ্চলের ৬ টি উপজেলার রুগী পরিবহনে সবচেয়ে অসুবিধা হয়। বিকল্প রাস্তায় অনেক ঘুরে আসতে হয় বিধায় যান জট থাকলেও বাধ্য হয়ে এই টার্মিনালের রাস্তা ব্যবহার করি।

প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন বাস যাত্রী বলেন, টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনালটি বর্তমান স্থান থেকে সরিয়ে বাইপাসে এর কাছে নেওয়া সময়ের দাবী। যত দ্রুত এই বাস টার্মিনালটি সরানো হবে ততোই টাঙ্গাইল শহরের জন্য মঙ্গল। এই নতুন বাস টার্মিনালকে কেন্দ্র করে একটি অপরাধি চক্র গড়ে উঠেছে তারা বিভিন্ন ভাবে যাত্রী ও পথচারিদের হয়রানি করে। তাই প্রশাসনের কাছে দাবী, এই টার্মিনালটি সরিয়ে শহরের বাইরে নেওয়া হোক।

অটো চালক সামছু বলেন, আমি রাবনা বাই পাস হতে নতুন টার্মিনাল হয়ে নিরালা মোড়ে অটো চালাই। যখন এই টার্মিনালে এসে পৌঁছাই তখন আর সময় ঠিক রাখতে পারি না। বিশেষ করে সকালে আর বিকেলে যান জটটি বেশী হয়।

দেওয়া এলাকার স্কুল ছাত্র রাকিব জানান, আমাদের স্কুলে যেতে খুব সমস্যা হয় এই টার্মিনালের কারনে। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে, গাড়ি আমাদের স্কুল ড্রেসে কাদা লাগিয়ে নষ্ট করে দেয়। এ ছাড়া অটো করে স্কুলে যাই। দেখুন কি যান জট কখন স্কুলে পৌছাব বলতে পারছি না।

টাঙ্গাইল বাস-মিনিবাস শ্রমিক সমিতির সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, যখন ১৯৮১ সালে এই বাস টার্মিনাল চালু করা হয় তখন থেকেই আমি এখানে কাজ করছি। এই টার্মিনালের কিছু জায়গায় অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড করে জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। আগে জেলা পরিষদের জায়গায় কিছু বাস রাখা যেত। এখন ওখানে মার্কেট তৈরী হচ্ছে। ফলে গাড়ী রাখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া বাস স্ট্যান্ডের দুই পাশে পৌর মার্কেট হওয়ার সেখানে গাড়ি রাখতে দেয় না দোকান মালিকগন। ফলে জায়গার অভাব হচ্ছে।যদি টার্মিনালের আশে পাশে সরকার কিছু জায়গা বরাদ্দ দেয় তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খ. ইকবাল হোসেন বলেন, শহর বেড়েছে, যান বাহনও বেড়েছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে জনসংখ্যও বেড়েছে। ফলে বর্তমান বাস টার্মিনাল আর আতিরিক্ত বাস ধারন করতে পারছে না। সরকারের কাছে আমাদের প্রস্তাব থাকবে এই টার্মিনালটির উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারন করে তিনতলা অথবা চার তলা করা যেতে পারে।। যদি উর্দ্ধমূখি সম্প্রসারন করা হয় তাহলে নতুন করে জায়গার প্রয়োজন হবে না। সেখানে এক দিক দিয়ে বাস প্রবেশ করবে আরেকদিক দিয়ে বাস বের হয়ে যাবে। যাত্রীদের খাওয়া-দাওয়া বিশ্রাম সহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা সহ বাস রাখার পর্যাপ্ত জায়গা হবে।উন্নত বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই ধরনের বাস টার্মিনাল আছে। আমাদের দেশেও শুরু করা হোক। বাস টার্মিনালটি হাসপাতাল সংলগ্ন হওয়ায় রুগীদের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না হচ্ছে না। যান বাহনের শব্দ কিম্বা কোলাহল হাসপাতালে পৌঁছায় না।

টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপালের তত্বাবধায়ক ডাঃ নারায়ন চন্দ্র সাহা এ প্রসঙ্গে বলেন, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল এর ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে হাসপাতালের সামনের রাস্তার দু’পাশের অবৈধ দোকান-পাট উচ্ছেদ করা অত্যন্ত জরুরী। এ ছাড়া এই জায়গায় রাস্তা পার হয়ে হাসাপাতালে আসার জন্য একটি ফুট ওভার ব্রিজ অত্যন্ত জরুরী।বাস টার্মিনাল হাসপাতাল সংলগ্ন হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে যে সব রুগী হাসপাতালে ভর্তি তাদের রাতে শব্দের কারনে ঘুমাতে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও হার্টের রুগীদের জন্য সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে টাঙ্গাইলে জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০০০ রুগীকে সেবা দেওয়া হয়। এর পর যখন মেডিকেল কলেজ পুনাঙ্গ ভাবে চালু হবে তখন রুগীর পরিমান তিন গুন হয়ে যাবে। তখন এই বাস টার্মিনাল একটি বড় সমস্যা তৈরি করবে।

টাঙ্গাইল পৌর সভার প্যানেল মেয়র মাহমুদা বেগম জেবু এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান স্থান থেকে বাস টার্মিনালটি রাবনা বাই পাস এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা, করি দ্রুত বাস টার্মিনালটি সরিয়ে নেওয়ার অনুমোদন পাওয়া যাবে।