আলোকিত জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দুর্গম পথ পারি দিয়ে
জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে প্রতিবন্ধী সম্রাট


প্রতিবন্ধী জীবনে অদম্য উৎসাহ ও মনোবলে ভর করে আলোকিত জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে দুর্গম পথ পারি দিয়ে চলমান জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সম্রাট।
পড়াশোনায় প্রচন্ড ঝোঁক ও অদম্য ইচ্ছা শক্তির বদৌলতে প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ঠেলে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার হাবলা টেঙ্গুরিয়াপাড়া আব্দুল্লাহেল বাকী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাসাইল গোবিন্দ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থী।
তার দু’টি পা-ই বিকল। তার পরেও সে হুইল চেয়ারে বসে লিখে যাচ্ছে পরীক্ষায় খাতায়। পা-নেই, তাতে কি ? প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে কখনো হামাগুড়ি কখনো হুইল চেয়ারে ভর করে মনের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলছে জীবন সংগ্রামের গন্তব্যে।
দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত সম্রাট জন্ম থেকেই শারিরীক প্রতিবন্ধি। শিক্ষার আলোয় নিজেকে আলোকিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভাল ফলাফলের আশাও করছে সম্রাট। ৮/১০জনের মতই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরী করার স্বপ্নও তার।
স¤্রাট বাসাইল উপজেলার হাবলা ইউনিয়নের টেঙ্গুরিয়াপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক হাবিবুর রহমান ও গৃহিনী শুকুরী বেগমের সন্তান। সে ২০১৪ সালের প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ এ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ন হয়ে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।
নিত্য অভাবী হাবিবুর রহমানের চার সন্তান। দুই ছেলে দুই মেয়ে। বড় মেয়েও প্রতিবন্ধী। তার এই প্রতিবন্ধী ছেলে সম্রাট কখনো পড়ালেখা করানোর কথা চিন্তাও করেনি। কিন্তু শৈশব থেকেই পড়ালেখা প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল তার।
প্রবল ইচ্ছা শক্তি যে সব অসম্ভবকে সম্ভব করে দূর্জয়কে জয় করা যায় তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে স¤্রাট। তার দরিদ্র বাবা আবেগাপ্লোত কন্ঠে বলেন, ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও লেখা পড়া করানোর খুব ইচ্ছা।
আমি গরিব মানুষ পেটের ভাতই জোগাতে পারি না ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাব কিভাবে ? তবে সরকারী-বেসরকারী ও বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতে পারে স¤্রাটের জীবন।
হাবলা টেঙ্গুরিয়াপাড়া আব্দুল্লাহেল বাকী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আব্দুস সামাদ বলেন, স¤্রাট প্রতিবন্ধী থাকলেও তার মনে অনেক জোর রয়েছে।
হামাগুড়ি দিয়ে স¤্রাট প্রায় প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতো। স¤্রাটকে বিদ্যালয় থেকে একটি হুইল চেয়ার দিয়েছি। এর পর থেকে তার বাবা-মা হুইল চেয়ারে করে বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতেন। সে সমাপনী পরীক্ষায় এ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। আমরা আশা করছি স¤্রাট জেএসসিতেও ভাল ফলাফল করবে।
বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, প্রতিবন্ধীরা দেশের বোঝা নয়। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা-দিক্ষার প্লাটফরমে এনে দেশ ও জাতির উন্নয়নের অংশীদার করানো সম্ভব।
সম্ভাবনাময় এই প্রতিবন্ধী যাতে অকালে ঝড়ে না পড়ে সে জন্য সমাজের সকলকে এগিয়ে আসা উচিৎ। তিনি আরো বলেন, প্রতিবন্ধী এই পরীক্ষার্থীর যাতে কোন সমস্যা না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।