সিংহদরবার: আগুনে আগুনে ঐতিহ্য হারাচ্ছে নেপাল


নেপালের সিংহদরবার, ১৯০৮ সালে রানা প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র শমশেরের নেতৃত্বে নির্মিত হয় এ প্রাসাদ। এর পরিকল্পনা ও নির্মাণ তত্ত্বাবধান করেন দুই নেপালি স্থপতি, কুমার নরসিংহ রানা ও কিশোর নরসিংহ রানা। সেই সময়ে প্রাসদটির নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় ৫০ লাখ রুপি।
লন্ডনের কিংস্টন ইউনিভার্সিটির স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং লেকচারার ঋষি রাম পরাজুলীর গবেষণায় জানা যায়, প্রাসাদটি ৫০ হেক্টর চওড়া সুপরিচ্ছন্ন লন ও সাতটি সংযুক্ত প্রাঙ্গণের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছিল। মূলত এটি ছিল আবাসন ও প্রশাসনিক কেন্দ্র। সিংহদ্বার তার সময়ে ১ হাজারেরও বেশি কক্ষ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রাসাদের শিরোপা পেয়েছিল এবং রানা শাসনের সম্পদ ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো।
৭ জুলাই ১৯৭৩ সালে সিংহদ্বারে এক বিধ্বংসী আগুন লাগে। পুরো প্রাসাদের বড় অংশ পুড়ে যায়, কেবল সামনের প্রাঙ্গণ রক্ষা পায়। আগুনের প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। ইতিহাসবিদ জগৎ নেপাল ও অন্যান্য সূত্র অনুসারে, আগুনে ষড়যন্ত্রের ছাপ রয়েছে। এই ক্ষয়ক্ষতি প্রশাসনিক কার্যক্রমে বড় প্রভাব ফেলে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী কির্তি নিধি বিস্তা ও মন্ত্রীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যাপ্তি এত বড় ছিল যে অনেক কিছুই রক্ষা করা যায়নি। ইতিহাসবিদেরা বলেন, প্রাসাদের পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করতে প্রায় ৪০-৫০ বছর লেগেছিল।
সম্প্রতি, ২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জেন জেড বিক্ষোভ চলাকালীন সিংহদরবারে আবারো আগুন লেগেছে। এটি নেপালের আধুনিক সময়ের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক ও প্রশাসনিক ক্ষয়ক্ষতির একটি। বিশিষ্ট সংবিধান ও প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ কাশীরাজ দাহাল বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা যখন নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়, তখন দেশের মূল্য আমরা পেয়েছি। সিংহদ্বারের আগুনই তার উদাহরণ।’ এই ক্ষতি শুধুই অবকাঠামোগত নয়, বরং এটি দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতির প্রতিফলন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নেপালের আর্কাইভ ও তথ্য সংরক্ষণের গুরুত্বও তুলে ধরেন ইতিহাসবিদ জগৎ নেপাল। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বার বার দুর্ঘটনার হাত থেকে ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে নেপালকেও পানি ও আগুন অগ্নি-প্রতিরোধী আর্কাইভ তৈরি করতে হবে।
এবারের ঘটনায় তরুণ প্রজন্মকে দোষারোপ করতে রাজি নন দাহাল। মূলত অব্যবস্থাপনা ও সুযোগবাদীদের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে বলে মত তার। অন্তবর্তী সরকারকে সিংহদরবার পুনর্নির্মাণে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, সিংহদরবার শুধু ইট ও পাথরের প্রাচীর নয়। এটি নেপালের জীবন্ত ইতিহাস, যা আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা অত্যাবশ্যক।