মাইকিংয়ে সরগরম ঘাটাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন


আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাইকিংয়ে প্রচার প্রচারনায় মুখরিত ১৯ প্রার্থীর গনসংযোগ ৷ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। প্রার্থীরা দিনরাত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের সমর্থন আদায়ে। গত ১৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) প্রতীক বরাদ্দর পর থেকেই জোরেশোরে চলছে প্রচারণা।
ঘাটাইলে ছয় জন চেয়ারম্যান, পাঁচ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও আট জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং তাদের সমর্থকরা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সারা ঘাটাইলের বিভিন্ন ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছেন।
আগামী ৩১ মার্চ চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনে টাঙ্গাইলে ১২টি উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। ঘাটাইলে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রতীক পেয়েছেন ছয় জন প্রার্থী। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু পেয়েছেন নৌকা প্রতীক।
সধুবং¿ প্রার্থী এবং বর্তমান উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আরিফ হোসেন পেয়েছেন আনারস প্রতীক। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক ও জামুরিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হেস্টিং পেয়েছেন মোটরসাইকেল প্রতীক। জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সৈয়দ তুহীন আব্দুল্লাহর ছেলে এহসান আব্দুল্লাহ পেয়েছেন উড়োজাহাজ প্রতীক। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম জনি পেয়েছেন ঘোড়া প্রতীক। এবং মোঃ মনিরুজ্জামান পেয়েছেন গোলাপ ফুল প্রতীক৷
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রতীক পেয়েছেন পাঁচ জন প্রার্থী। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন পেয়েছেন টিউবওয়েল প্রতীক। যুবলীগ নেতা সুলতান মাহমুদ পেয়েছেন চশমা প্রতীক। যুবলীগ নেতা সুমন খান (বাবু) পেয়েছেন টিয়া প্রতীক। কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সহ সভাপতি সজীব সরকার পেয়েছেন মাইক প্রতীক। এবং শিল্পপতি কাজী আরজু পেয়েছেন তালা প্রতীক। এছাড়া এম এম সোয়েব এবং তুহীন খান তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রতীক পেয়েছেন আট জন প্রার্থী। বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কানিজ ফাতেমা পেয়েছেন হাঁস প্রতীক। উপজেলা মহিলা লীগের নেত্রী নুরজাহান সিদ্দিকা পেয়েছেন ফুটবল প্রতীক। ঘাটাইল পৌরসভার ওয়ার্ড কমিশনার মোঃ কবির হোসেনের সহধর্মিণী শাহিনা আক্তার শিল্পী পেয়েছেন সেলাইমেশিন প্রতীক।
উপজেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগে সিনিয়র সহ সভাপতি আবু মোঃ শোয়েব (ডন) এর সহধর্মিণী মীর আলেয়া পারভীন পেয়েছেন বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক। তাসলিমা জেসমিন পেয়েছেন প্রজাপতি প্রতীক। মরিয়ম আক্তার পেয়েছেন ফুলদানী প্রতীক। আফিয়া বেগম পেয়েছেন পদ্মফুল প্রতীক। এবং ফাহিমা তালুকদার পেয়েছেন কলসি প্রতীক।
ঘাটাইলের সর্বত্র গানে গানে চলছে প্রার্থীদের পক্ষে সরব প্রচারণা। জনপ্রিয় সব গানের প্যারোডি করে মাইকযোগে ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করছেন ঘাটাইলবাসী। তাঁদের অভিমত, বিগত নির্বাচনগুলোতে মাইকের মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে কান ঝালাপালা হতো। এ ক্ষেত্রে গানের সুরে সুরে ভোট চাওয়ার পদ্ধতি যেমন অভিনব, তেমনি বিরক্তহীন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাটাইলের ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের সমর্থনে বেলা দুইটার পর থেকে মাইকযোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ সময় অধিকাংশ প্রার্থীর প্রচারণায় বিভিন্ন সংগীতশিল্পীর জনপ্রিয় গান প্যারোডি করে ভোট চাইছেন।
গত শনিবার বেলা তিনটায় ঘাটাইলের কদমতলি এলাকায় কথা হয় এক ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থনে মাইকিং করা ফরহাদ হোসেনের সাথে। ফরহাদ বলেন, ‘বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের “বন্ধে মায়া লাগাইছে” গানটি প্যারোডি করে “ভাইয়ে মায়া লাগাইছে, প্রতীক পিরিতি বাড়াইছে” গানটি গেয়েই প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাই। এতে ভোটারদের সাড়াও পাচ্ছি বেশ।’
প্রচারণার এ ধরনটি ‘অভিনব ও শ্রুতি-সুখকর’ আখ্যায়িত করে জনৈক আকরাম হোসেন বলেন, ‘অতীতে মাইকের মাত্রাতিরিক্ত শব্দে নগরবাসী চরম উৎপাত অনুভব করতেন। আসন্ন নির্বাচনকে উপলক্ষ করে মুষ্টিমেয় কয়েকজন প্রার্থী গানের সুরে প্রচারণা চালানো শুরু করার পর তাঁদের অনুসরণ করে প্রায় সবাই এ রকম প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। এতে নগরবাসী শব্দদূষণ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, সারাদেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চারটি ধাপের তাফসিল ঘোষনা করে নির্বাচন কমিশন ৷ এরই ধারাবাহিকতায় চতুর্থ ও শেষ ধাপে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের নির্বাচন ৷
ঘাটাইলে পৌরসভা ১টি, ইউনিয়ন ১৪টি, ভোট কেন্দ্র ১১৯টি। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৭ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬৯ জন, মোট ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৬ জন। ৩১শে মার্চ ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে ৷