হেমনগর কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:১৬ পিএম, মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ | ৫২৩

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ বীরেন্দ্র চন্দ্র গোপের বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ। এসব অভিযোগের কোন কোনটি আবার মানুষের মুখরোচক খবরে পরিণত হয়েছে।

 জানা যায় অধ্যক্ষ বীরেন্দ্র চন্দ্র গোপ ২০০৮ সালে এ কলেজে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই সকল স্টাফদের সাথে তার বৈরিতা শুরু হয়। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তিনি একতরফা বাণিজ্য শুরু করেন। বিগত দশ বছরে পাঁচটি নিয়োগে তিনি প্রায় পনেরো লক্ষ টাকা বাণিজ্য করেন।

সবচেয়ে হাস্যকর অভিযোগ হলো কলেজের বিদ্যুতের মিটার থেকে অবৈধ সংযোগ দিয়ে টাকা রোজগার। হেমনগর কলেজের নামে পল্লী বিদ্যুতের একটি মিটার রয়েছে। ওই মিটার থেকে কলেজ ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। অধ্যক্ষ ওই মিটার থেকে কলেজ পাড়ার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে চোরাই লাইন দিয়েছে। এ চোরাই লাইনের মাধ্যমে তিনি প্রতি মাসে তিন-চার হাজার টাকা আদায় করেন। আদায় করা টাকা পকেটে পুরেন তিনি।

আর কলেজের ক্যাশ থেকে বিদ্যুৎ বিলের সমুদয় টাকা পরিশোধ করা হয়।  এভাবে প্রতি বছর কলেজকে লক্ষ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ খাতে গচ্ছা দিতে হয়। কলেজের কয়েকজন স্টাফ অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ চুরির মাধ্যমে অবৈধ আদায়ের বিষয়টি সবাই জানেন। এ হীন মন্যতার প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা অনেকেই অধ্যক্ষের রোষানলে পড়েছেন। জমিদার হেমচন্দ্রের পরীদালান নামে খ্যাত রাজবাড়ীতে অবস্থিত কলেজটির ভেতরে রয়েছে বিশাল দীঘি। দীঘিটি নামে মাত্র মূল্যে লীজ দেয়া হয়েছে।

রাজবাড়ীর ভেতরে রয়েছে ফলমূলের বিশাল বাগান। ফল বাগান আর দীঘি লীজ বাবদ কলেজ বছরে মাত্র এক লক্ষ টাকা পেয়ে থাকে। অথচ এটি ওপেন ডাক হলে বার্ষিক তিনচার লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। কিন্তু গোপনে লিজ দিয়ে কলেজকে ঠকিয়ে নিজে অর্ধলক্ষ টাকা লাভবান হচ্ছেন।

স্টাফদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, নিয়মিত কলেজে না আসা, চেকের মাধ্যমে ঘুষগ্রহণ, কলেজের ফটোমেশিন বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।শিক্ষক পরিষদের সদস্যরা জানান কলেজে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিগত ৫ বছরেও কলেজে কোন আভ্যন্তরীন অডিট হয়না।  ফলে নিজের ইচ্ছামতো খরচ করছেন কলেজের ক্যাশের টাকা।

বিএমসহ ডিগ্রী পর্যায়ে কলেজে ভর্তি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের কোন রশিদ দেয়া হয় না। অনলাইন আবেদনের ফি বাবদ আদায়ের টাকা বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়কে অংশ পরিশোধের পর বাকি টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন তিনি।এক বছর আগে কলেজের পুরাতন ফটোকপি মেশিন ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি  করেন।

সে টাকা কলেজের ক্যাশ বা ব্যাংক হিসাবে জমা দেননি তিনি।কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মৃত মীর খালেকুর রহমানের মামলা জটিলতার কারনে পরবর্তিতে কলেজে যোগদানের জন্য ২০১৭ সালে চেকের ( চেক নং-১৩৮৯২৩৪) মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণ করেন অধ্যক্ষ। অভিযোগ রয়েছে ফ্যাসিলিটিস ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক কলেজে নির্মিতব্য চারতলা ভবনের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারীর কাছ থেকে তিনি বখরা আদায় করেন।

কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির নাম ভাঙ্গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিজের পকেটে তুলছেন তিনি। কলেজে যোগদানের পর কোন অডিট হয় না। তার ভয়ে কলেজের কোন শিক্ষক প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ বীরেন্দ্র চন্দ্র গোপ জানান,  শিক্ষক খালেকুর রহমানের মামলা জটিলতার কারনে বেতন বন্ধ ছিল। সেই কারনে কিছু টাকা নিয়ে বোর্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় দিতে হয়েছিল। এজন্য কিছু টাকা তিনি উত্তোলন করেছিলেন। অন্যান্য অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে তিনি দাবি করেন।