স্বাধীনতার সুফল বাংলার ঘরে ঘরে পৌছে দিব-প্রধানমন্ত্রী

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০৮ পিএম, মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ ২০১৮ | ৪২৪

বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাক, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। স্বাধীনতার সুফল বাংলার ঘরে ঘরে পৌছে দিব। অর্থ সম্পদ চিরদিন থাকে না। কেউ করবে নিয়েও যেতে পারে না। অর্থ সম্পদের জন্য মারামারি-কাটাাকাটি করে, কিন্তু মরে গেলে সবই পড়ে থাকে। মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া একজন রাজনীতিবিদের কাজ করে যাওয়াই লক্ষ্য। জাতির পিতার সন্তান হিসেবে আমি সেটাই করতে চাই। নিজেদের সম্পদ করতে আসিনি। দেশের একটা মানুষও না খেয়ে থাকবে না, একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে তৃণমূল পর্যায় থেকে উন্নয়ন করা।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, তখন ক্ষমতায় থেকে অত্যাচার নির্যাতন করেছিল বিএনপি সরকার। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর প্রথম গ্রেফতার করা হলো আমাকে। আমি তো সরকারের ছিলাম না। কারা এই কাজ করেছে, তা অন্তত এখন আমি জানি। তাদের হিসাব-নিকাশ পরে করব।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রায় ৫০ মিনিটের বক্তব্যে দেশ গঠনে জাতির জনকের ভূমিকা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে কী কী ষড়যন্ত্র হয়েছে তার উল্লেখ করেন। এর সূত্র ধরেই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তাকে গ্রেফতারের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যারা গ্রেফতার করিয়েছিলেন তাদের হিসাব-নিকাশ পরে নেবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে ষড়যন্ত্র হলো। ভোট বেশি পেয়েও ক্ষমতায় আসতে পারিনি। ওই সময় বিএনপি-জামায়ত জোট ক্ষমতায় এসে শুরু করল জুলুম-অত্যাচার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো তারা গ্রামের পর গ্রাম নির্যাতন চালিয়েছে। মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, মানুষের চোখ তুলে নিয়েছে, হাত-পা ভেঙে দিয়েছে, ক্ষেতের ফসল নষ্ট করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, পুকুর কেটে দিয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। ভোট দেয়ার অপরাধে এমন কোনো অত্যাচার নেই, তারা করেনি। ছয় বছরের শিশুকে পর্যন্ত ধর্ষণ করেছে। প্রতিহিংসার বশে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এসব করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাঁচ পাঁচটি বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে বাংলাদেশকে। তাদের দুর্নীতি আর অপশাসনের কারণেই ইমাজেন্সি সরকার আসে। ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি আর অত্যাচার করে বিএনপি। আমার প্রথমেই আমাকে গ্রেফতার করা হয়। কারা এই কাজ করেছে, তা আমি জানি, সে হিসাব-নিকাশ পরে করব।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনেও যেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারে, তার জন্যও ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপ দেন। এর ৪৩ বছর পর আজ দেশ উন্নয়নশীল হয়েছে। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করেছি। আমরা বাজেট বাড়িয়েছি, দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছি।

পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে কারো নাম না নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটা ভদ্রলোক, বিশ্বের অনেক নামকরা পাইজ পেয়েও তার মন ভরেনি। ক্ষুদ্র একটি ব্যাংকের এমডির পদের লোভে পদ্মা সেতু বন্ধ করার জন্য আমেরিকায় লবিং করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে টাকা বন্ধ করে দেয়। আমি আগেই বলেছি, জাতির পিতা বলেছেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা বাঙালি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। আমিও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। দুর্নীতির যে অভিযোগ আনার বহু চেষ্টা করা হয়েছিল। আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এজেন্সি হায়ার করে এনে আমার বিরুদ্ধে, আমার বোনের বিরুদ্ধে এবং আমার ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিলেন যে কোন দুর্নীতি পায় কিনা? কিন্তু পায়নি। আমার সেই এমডি সাহেবও আমেরিকাকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছে। দুর্নীতি না পেয়ে ওয়াল্ড ব্যাংককে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করিয়েছে। কানাডার ফেডারেল কোটে মামলা হয়েছিল। কিন্তু মামলায় দুর্নীতির প্রমাণ পায়নি। অভিযোগটি ছিল ভুয়া। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল, দেশ ৫ বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, আমরা যে দুর্নীতি করিনি, এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের মানুষের মুখ উজ্জল হয়েছে।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, লাখো শহীদ রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেন ব্যর্থ হতে দিব না। আর যারা স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চায় তারা যেন আর কোনদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। এই দেশ জঙ্গিদের হবে না। এই দেশ স্বাধীনতা বিরোধীদের হবে না। এই যুদ্ধাপরাধীরদের হবে না। এই দেশ হবে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ। সেই দেশ হিসেবেই আমি গড়ে তুলতে চাই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালে সরকার গঠন করেছি। এরপর ২০১৩ সালে তারা এক দুর্বিষহ অবস্থা তৈরি করে। সেই অবস্থা আমরা সামাল দিয়েছি। ২০১৪ সালে আবার নির্বাচন হয়, মানুষের ভোটে ক্ষমতায় আসি। কিন্তু তারা ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে। সাড়ে ৩ হাজার মানুষ পুড়িয়েছে। হাজার হাজার গাড়ি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। সরকারি অফিসে আগুন দিয়েছে। কেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো্ত এটাই তাদের অন্তর্জ্বালা। তারা তো ক্ষমতায় থেকে ভোগ-বিলাস করেছে, মানি লন্ডারিং করে ধরা পড়েছে। এতিম খানার টাকা পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। সবকিছু ধরা পড়েছে। এতে আমাদের কোনও হাত নেই। কিন্তু আদালত তাদের সাজা দিলে তারা মানে না। তারা কিছুই মানে না। তারা ক্ষমতায় থেকে মানুষকে হত্যা করেছে, এখনও তাই করতে চায়। দেশের কোনও উন্নয়ন তারা চোক্ষেই দেখে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক হারুন-উর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ। দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদের পরিচালনায় সুচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।