অভিশপ্ত হওয়ার পথে বদরখালী বাজারের পরিবেশ!


বদরখালী বাজার এখন উপকূলীয় অঞ্চলের বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল। এখানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগম হয়। শুধু তাই নয় পাশের ইউনিয়নে কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ কাজ চলায় বাইরের লোকেরাও উক্ত বাজারে আসে, পরিবেশ গত দিক বিবেচনা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়।
বদর আউলিয়ার প্রিয় এলাকা বদরখালী ইউনিয়ন। চকরিয়া উপজেলার অন্যতম ইউনিয়ন হচ্ছে বদরখালী। বদরখালী ইউনিয়নের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি ও মৎস্য নির্ভর। ধান, লবণ, মাছ, গাছ, চিংড়ি, তাঁত, কাঁকড়া, শুটকিসহ রয়েছে বিপুল অর্থকরী সম্পদ। এসব সম্পদ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় চালান হচ্ছে।
বিশেষ করে মাছ ও লবণ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চলে যাচ্ছে। বদরখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে মিঠা পানির মাছ , সোনালী ধানের ক্ষেত ও রূপালী দানার খৈ-এর মতো লবণের মাঠ। পুরুষ পরম্পরায় এ অঞ্চলের মানুষ এই সম্পদের উপর ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বদরখালীতে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য আলেম, শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, জজ, উকিল ইত্যাদি। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব বৃহৎ সমবায় ও কৃষি উপনীবেশ সমিতি এই ইউনিয়নে।
ববদরখালী বাংলাদেশের একটি মাত্র ইউনিয়ন যা সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। কক্সবাজার জেলার অন্যতম প্রধান বাজার হচ্ছে বদরখালী বাজার। প্রতি বছরই লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিলাম দেওয়া উক্ত বাজার। জনসংখ্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, বদরখালী বাজারের সীমানাও বাড়ছে। সপ্তাহের শুক্রবার ও মঙ্গলবার ২ দিন বদরখালী বাজারে হাঁট বসে। প্রতি হাঁটে মহেশখালী, মাতারবাড়ী, ধলঘাট, উজানটিয়া, ঢেমুশিয়া, দরবেশকাটা, ইলিশিয়া, কোনাখালী ইত্যাদি এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ বেচা-কেনা করতে আসে। সপ্তাহে ২ দিন প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আদায় করে থাকে বাজার কমিটি।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, দিন যত যাচ্ছে বদরখালী বাজার তত নোংরা হচ্ছে। বর্তমানে বলা যায়, অভিশপ্ত বদরখালী বাজার। বাজার পরিচালনা করার জন্য রয়েছে বাজার কমিটি। কিন্তু তারা নিরবে সব সহ্য করে বদরখালীবাসীর সাথে তামাশা করছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখতে পাই, বদরখালী বাজারের সব অলি-গলিতে নোংরা জিনিসপত্র ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা।
প্রায় দোকানের সামনে আলাদা দোকান বসিয়ে ইনকামের পথ খুঁজছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিশেষকরে দোকানের সামনে যে নালাগুলো রয়েছে, তার উপর তক্তা বসিয়ে নালা দখল করে প্রায় সময় বেচা-কেনা করছে হকারের মতো দোকানদাররা। বর্তমানে পানি চলাচলের বেশির ভাগ নালা ময়লা ফেলে ভরাট করে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। মাংসের দোকানে গিয়ে দেখতে পাই, প্রচুর নোংরা পরিবেশে তারা মাংস বিক্রি করছে এবং বাজারের সাইটঘরের ভিতরে গরু জবাই করার পর মাংসের উচ্ছিষ্ট পদার্থ নালায় ফেলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। দোকানের সামনে হাঁটার রাস্তা দখল করে নিচ্ছে অনেক দোকানদার।
বদরখালী বাজারের থাই ফুডের ডিলারের দোকান, আতাউল্লাহ সওদাগরের দোকান, রিমন সওদাগরের দোকান, বেলাল সওদাগরের দোকান, জননী ডেকোরেটার্স,হারুন হার্ডওয়ার,জুনাইদ ট্রেডার্স,তানিয়া ষ্টোর ও সোলেমান ক্লথ স্টোরের সামনের নালায় প্রচুর ময়লা ফেলে বাজারের পরিবেশ নষ্ট করছে ভাসমান হকারসহ মুরগীর ফার্মের দোকানদাররা। এমনকি তাদের ব্যবহৃত সমস্ত দূষিত পানি দোকানের সামনে ফেলছে প্রতিদিন এবং খোলা জায়গায় হকার রা প্রশ্রাব করে বাজার কে ডাস্টবিনে পরিণত করছে।
বাজার কমিটির সম্পাদক মন্জুর আলমের সাথে মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বাজারের পরিবেশ নোংরা হচ্ছে ঠিক, কিন্তু এবিষয়ে হকার ও দোকানদারদেকে বহুবার বলার পর তারা আমার কথা কর্ণপাত করছে না। তিনি বাজারের নোংরা পরিবেশ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছেন বলে জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন,বর্তমানে হকাররা নালা দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাখায় নালা পরিষ্কার করতে না পারায় পুরো গলি গন্ধে পরিবেশ ভারী হয়ে যাচ্ছে। যার দরুণ মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
বাজারের দক্ষিন গলি শুটকী মাছ বাজারে গিয়ে দেখা গেল নোংরা পরিবেশের মহোৎসব। অর্থাৎ শুটকী মাছ বাজার বর্তমানে একটি বিশাল ডাস্টবিন।বদরখালী বাজারের দক্ষিণ লেইনের পানি চলাচলের একমাত্র নালা দীর্ঘদিন ধরে ড্রেসিং না করায় ভরাট হয়ে পানি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
এ ব্যাপারে বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশরের কাছে জানতে তিনি এবিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। কিছু কিছু দোকানের সামনে গিয়ে দেখি, হকাররা নালার স্লেপ ভেংগে নালা দখল করে পণ্য সাজায় রাখছে। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা বাজার কমিটিকে ভাড়া/হাচিল দিয়ে ব্যবসা করছি।
বাজারের এক দোকানদার (নাম গোপন রাখা হয়েছে) বলেন, আজকের এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে বদরখালী বাজারের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
অনেক দোকানদার বলেছেন, বর্তমানে সুষ্ঠুভাবে হাঁটাচলা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেদিকে যায়, সেই দিকে দুর্গন্ধ। তারা বলেন, দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা যদি রাস্তায় এভাবে রাখে মানুষ চলাচলে সমস্যা সহ স্বাস্থ্য কি হুমকির সম্মুখীন নয়? এ ব্যাপারে তারা সরাসরি বাজার কমিটিকে দায়ী করেন।
বদরখালী বাজারের দক্ষিণ লেইনে নালার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে ক্রেতা বিক্রেতা সবাই। আমি নিজে গিয়ে দেখি এমন দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা।
গতমাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুদ্দীন মো. শিবলী নোমান কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করছিলেন। উক্ত অভিযানে বদরখালীবাসী সপ্তাহখানিক স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু এখন সেই অভিযানের চিহ্নমাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে বাজার কমিটি তাদের নিরব ভূমিকা পালন করছেন বলে দোকানদার অভিযোগ করছেন।তারা বলেন,বাজার পরিচালনার জন্য নির্বাচিত কমিঠির দরকার,প্রতিবার চেয়ারম্যানের পছন্দের মানুষদের বাজার পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শীঘ্রই আবারো অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং বাজার কমিটি, সমিতির সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক বসবেন এবং প্রয়োজনে বাজার কমিটির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।