গাজা ইস্যুতে অস্ট্রেলিয়ায় নজিরবিহীন বিক্ষোভে সমীকরণ পাল্টে যাওয়ার ইঙ্গিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫ | ২১৪

গাজা উপত্যকায় চলমান মানবিক বিপর্যয় ও সহিংসতার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ। গত রোববার সিডনি হারবার ব্রিজ জুড়ে লাখো মানুষ শীতল বাতাস ও ভারি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে পদযাত্রায় অংশ নেন। বিক্ষোভকারীদের মূল দাবি ছিল ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা, দ্বিমুখী অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ, গাজায় ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি। এই বিশাল সমাবেশের পর গাজা ইস্যু নিয়ে পশ্চিমাদের ভাবনার সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সিএনএনের প্রতিবেদন।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকার সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে এখন রয়েছে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা এরইমধ্যে এ পথে হাঁটার অঙ্গীকার করেছে।

এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া পশ্চিম তীরে সহিংসতা উসকে দেয়ার অভিযোগে ইসরায়েলের দুই চরম ডানপন্থী মন্ত্রীকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ইয়ান পারমেটার বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। মানবাধিকার সংস্থার সাবেক নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথও বলেন, ট্রাম্প চাইলে সামরিক সহায়তা শর্তসাপেক্ষ করতে পারেন। তবে তিনি সত্যিই যুদ্ধ থামাতে চাপ দেবেন কিনা তা অনিশ্চিত।

অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিম ও ইহুদি সম্প্রদায় উভয়ের মধ্যেই গাজা সংঘাতের প্রভাব গভীর। অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইহুদিবিরোধী ও ইসলামবিদ্বেষের ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। এ নিয়ে সরকারি দূতরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

রোববারের পদযাত্রা ছিল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ নিরাপত্তার অজুহাতে সুপ্রিম কোর্টে পদযাত্রা বন্ধের আবেদন করেছিল, যা আদালত খারিজ করে দেয়।

বিক্ষোভ নিয়ে গণমাধ্যমে বিভাজন স্পষ্ট। কিছু সংবাদপত্র একে ‘অরাজকতা’ বলেছে, অন্যরা একে ‘সিডনির মানবিক চেতনার জাগরণ’ হিসেবে তুলে ধরেছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা'র বিক্ষোভকারীদের সমালোচনা করে অস্ট্রেলিয়ানদের জেগে ওঠার আহ্বান জানান।

বিক্ষোভের পর অস্ট্রেলিয়ান সরকার গাজায় অতিরিক্ত ২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অস্ট্রেলিয়ার মোট সহায়তা দাঁড়িয়েছে ১৩০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে। তবে বিক্ষোভকারীদের অন্যান্য দাবিতে সরকার সাড়া দেয়নি।

প্যালেস্টিনিয়ান অ্যাকশন গ্রুপ আগামী ২৪ আগস্ট সারা দেশে আরো বড় কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। জশ লি বলেন, ‘এই বিশাল প্রদর্শন বিশ্বকে দেখিয়েছে যে ধারা বদলাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় ন্যায়বিচারের জন্য দাঁড়াতে প্রস্তুত।‘