বিভিন্ন শহরে রুশ হামলা, প্রায় সারাক্ষণ বাজছে যুদ্ধের সাইরেন


রাজধানী কিয়েভসহ পুরো ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন শহরে মুহুর্মুহু রকেট ও বিমান হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
খারকিভে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১৩ জন। মাইকোলাইভ শহরে ক্রমাগত রকেট হামলা চলছে।
নিপ্রো থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জো ইনউড বলছেন হামলা সম্পর্কে সতর্ক করতে প্রায় সারাক্ষণই সেখানে বাজছে যুদ্ধের সাইরেন।
ইউক্রেনের পশ্চিমের ডনবাস থেকে মারাত্মক জখম হওয়া নাগরিক একটি ট্রেনে করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর দিচ্ছেন তিনি।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলেছেন রাশিয়া মারিউপোলকে একেবারে মাটির সাথে গুড়িয়ে দিতে চায়। শহরের কিছুই যেন আর অবশিষ্ট নেই।
রাশিয়া শহরটিতে প্রবেশ বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করছে বলে শহরের কর্মকর্তারা বলছে।
তবুও এরই মধ্যে মারিউপোলে আত্মসমর্পণের জন্য রুশ আল্টিমেটামে সাড়া দেয়নি ইউক্রেন। যদিও রাশিয়া বলছে পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের হাতে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধ লড়াই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী দেনিস শেমহাল।
যদি মারিউপোলের পতন ঘটে, এটি হবে গত দুমাসের যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।
মারিউপোল হচ্ছে আযভ সাগর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বন্দর। এটি লৌহ এবং ইস্পাত শিল্পের বড় কেন্দ্র।
ইউক্রেনের বেশিরভাগ ইস্পাত, কয়লা এবং শস্য এই বন্দর দিয়েই রফতানি করা হয়। এটি হারালে ইউক্রেনের অর্থনীতির জন্য সেটি হবে আরেকটি বড় আঘাত।
রাশিয়া যদি এই শহর দখল করতে পারে, তাহলে ক্রাইমিয়া থেকে রাশিয়া পর্যন্ত তারা একটি সরাসরি স্থল সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
এটি হবে রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এবং সামরিক বিজয়।
রাশিয়া দাবি করছে, তারা শহরটির বেশিরভাগ এলাকায় পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
তবে মারিউপোলের আযভস্টল ইস্পাত কারখানা, যেটিকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইস্পাত শিল্প বলে গণ্য করা হয়, সেটি এখনো তারা দখল করতে পারেনি।
অবশিষ্ট ইউক্রেনিয়ান যোদ্ধারা সেখানেই আছে।
তবে বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলার কথা অস্বীকার করে রাশিয়া বলছে, ইউক্রেনে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে দেশটিকে নিরস্ত্রীকরণের উদ্দেশ্যে এবং দেশটির বিপজ্জনক জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে।
ওদিকে আরো এক রুশ জেনারেল যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
দেশটির অষ্টম আর্মি'র ডেপুটি কমান্ডার মেজর জেনারেল ভ্লাদিমির ফ্রোলভ সহ মোট সাতজন জেনারেল নিহত হওয়ার কথা বলছে পশ্চিমা দেশগুলো।
যদিও রাশিয়া এই খবর নিশ্চিত করেনি।
অন্যদিকে কিয়েভে নতুন রুশ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রকে লিখিতভাবে সতর্ক করেছে রাশিয়া যে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ না করলে "অপ্রত্যাশিত পরিণতি" ভোগ করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্প্রতি ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত ৮০ কোটি ডলার মূল্যের সামরিক সাহায্য দেওয়ার একটি প্রস্তাব অনুমোদন করার পর রাশিয়া এই হুঁশিয়ারি দিল।
কিন্তু যুদ্ধের মধ্যেই পোল্যান্ড থেকে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন পালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনের অনেক বাসিন্দা।
পোল্যান্ডের সীমান্ত বাহিনী বলছে শনিবার বাইশ হাজারের মতো ইউক্রেনিয়ান দেশটির সীমান্ত অতিক্রম করেছে।
আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া দেয়নি ইউক্রেন
অবরুদ্ধ শহর মারিউপোলের অবশিষ্ট ইউক্রেনিয়ান সেনাদের আত্মসমর্পণের জন্য রাশিয়া সময়সীমা বেঁধে দেয়ার পরও এখনো তাতে কেউ সাড়া দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।
মস্কো বলছে, মারিউপোলের অবশিষ্ট ইউক্রেনিয়ান সেনাদের সবাই এখন এক বিশাল ইস্পাত কারখানার ভেতর অবস্থান নিয়ে রয়েছে। রাশিয়া আরও বলছে, মারিউপোল শহর এখন প্রায় পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আযভস্টল ইস্পাত কারখানার ভেতর এখন প্রায় আড়াই হাজার ইউক্রেনিয়ান সেনা আছে।
সেখান থেকে তাদের বেরুবার পথ বন্ধ করে রেখেছে রুশ বাহিনী।
বিবিসি অবশ্য এসব দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
তবে মারিউপোলের মেয়রের একজন উপদেষ্টা টেলিগ্রামে এক পোস্টে জানিয়েছেন, তাদের বাহিনী এখনো প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের একজন এমপি, ওলেক্সি গনচারেনকোও বিবিসিকে বলেছেন, মারিউপোলে ইউক্রেনের সৈন্যরা রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।
তিনি বলেন, "আমি গতকালই তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি জানি যে তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।"
ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে রাশিয়া তেমন সুবিধা করতে না পারার পর পূর্বের ডনবাস অঞ্চলের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল।
তবে এর পাশাপাশি তারা দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে রাজধানী কিয়েভে এবং অন্যান্য এলাকায় হামলা অব্যাহত রাখে।
রাশিয়া দাবি করছে, তারা শহরটির বেশিরভাগ এলাকায় পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে মারিউপোলের আযভস্টল ইস্পাত কারখানা, যেটিকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইস্পাত শিল্প বলে গণ্য করা হয়, সেটি এখনো তারা দখল করতে পারেনি। অবশিষ্ট ইউক্রেনিয়ান যোদ্ধারা সেখানেই আছে।
রাশিয়া বলেছিল, যারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আত্মসমর্পণ করবে, তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হবে।
মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল ছয়টার পর কয়েক ঘণ্টা ধরে রুশ বাহিনী বলছিল, তারা আযভস্টাল ইস্পাত কারখানার এলাকা থেকে বেরিয়ে এসে অস্ত্র সমর্পণ করলে তাদের প্রাণে মারা হবে না।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, যারা এভাবে আত্মসমর্পণ করবে, তাদেরকে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধবন্দীর সব অধিকার দেয়া হবে।
আধ ঘণ্টা পর পর রুশ বাহিনী আত্মসমর্পণের এসব শর্ত তাদের প্রতিপক্ষকে জানাচ্ছিল।
সুত্র:বিবিসি বাংলা