আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস-প্রধানমন্ত্রী


বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪২তম জাতীয় সমাবেশ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে আনসার ভিডিপি একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সমাবেশে ভিডিও টেলি-কনফারেন্স(ভিটিসি) এর মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে সশরীরে উপস্থিত থেকে প্যারেড পরিদর্শন করেন স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন,বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম,অতিরিক্ত মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান ও আনসার-ভিডিপি একাডেমি কমান্ড্যান্ট উপ-মহাপরিচালক একেএম জিয়াউল আলম। আনসার-ভিডিপি একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে সকাল ৯টায় বিএইচএম মোঃ মজিবর রহমানের প্যারেড গ্রাউন্ডে আগমনের মধ্যদিয়ে কুচকাওয়াজ শুরু হয়।
আনসার বাহিনীর শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে একে একে মাঠে প্রবেশ করে ইউনিট পতাকাবাহী কন্টিজেন্ট; ব্যাটলিয়ন আনসার পুরুষ কন্টিজেন্ট, ব্যাটলিয়ন আনসার মহিলা কন্টিজেন্ট,সাধারণ আনসার,ভিডিপি-টিডিপি পুরুষ কন্টিজেন্ট; সাধারণ আনসার ভিডিপি-টিডিপি মহিলা কন্টিজেন্ট; আনসার গার্ড ব্যাটলিয়ন(এজিবি)কন্টিজেন্ট ও বাহিনীর সুসজ্জিত বাদক দল।
সবশেষে প্যারেড গ্রাউন্ডের ডান দিক থেকে মাঠে প্রবেশ করে জাতীয় পতাকাবাহী কন্টিজেন্ট। ৪২তম জাতীয় সমাবেশের প্যারেড কমান্ডার রাজীব হোসাইন এর নেতৃত্বে প্যারেড মার্চ পাষ্ট করে স্বরাষ্টমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। এর পর সকাল ১০টায় ভিডিও টেলিকনফারেন্সিং (ভিডিসি)‘র মাধ্যমে যোগদান করে সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কুচকাওয়াজকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন,বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। ভাষণে তিনি বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরেন। জাতির পিতা বঙ্গকন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে বাহিনীর কর্মকান্ড ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।আনসার ও ভিডিপির বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কথা তুলে ধরেন সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন। বাহিনীর সার্বিক কার্জক্রম নিয়ে বক্তব্য রাখেন,স্বরাষ্ট মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অবদান তুলে ধরেন।
এর পর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্টমন্ত্রী বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মাঝে পদক প্রদান করেন। অসম সাহসিকতা ও বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ সেবামূলক কাজের জন্য বাহিনীর ১৬২জন সদস্যকে আট ক্যাটাগরিতে পদক প্রদান করা হয়। এরপর বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪২তম জাতীয় সমাবেশে দিক নির্দেশনাপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রয়েছে এক গৌরবোজ্জল ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। তিনি বলেন , সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতাবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে এ বাহিনীর সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ১৭এপ্রিল ১২জন বীর আনসার সদস্য মুজিবনগরের আম্রকাননে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে ‘গার্ড অব অনার‘ প্রদান করে এ বাহিনীকে করেছে গৌরবান্বিত। ভাষাশহীদ আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বারসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী ৬৭০ জন বীর আনসারসহ সব শহীদকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই। বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী এবং ৪২তম জাতীয় সমাবেশ -২০২২’ উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ৪২তম জাতীয় সমাবেশ-২০২২ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি বাহিনীর সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
তিনি বলেন,বাংলাশে আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড ও সাফল্যের অন্যতম অংশিদার। জনসম্পৃক্ত সুশৃঙ্খল এ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ,পরিবার পরিক্ল্পনা,জনস্বাস্থ্য,দুর্যো গ মোকাবিলা,পরিবেশ রক্ষা,বৃক্ষরোপন নারী ও শিশুপাচার রোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অনবদ্য অবদান রাখছে। নারীর ক্ষমতায়ন,জনকল্যাণ ও উন্নতজাতি গঠনে প্রায় ৬১লাখ সদস্যের এ বাহিনীর বহুমুখী উন্নয়নমূলক কর্মতৎপরতা সত্যিই প্রশংসনীয়। এছাড়া খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে এ বাহিনীর সদস্যরা অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে।
সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার এ বাহিনীর আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । বাহিনীর সদস্যদের জন্য নতুন পোশাক প্রবর্তন,পারিবারিক রেশন প্রদান,সাধারণ আনসারের রেশন সামগ্রীর পরিমান বৃদ্ধি,সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্টীয় পদক প্রবর্তন কর্মকর্তাদের জন্য বিভিন্ন গ্রেডে পদ সৃজন,টিআইদের পদোন্নতি এবং কর্মকর্তা ,কর্মচারী ও ব্যাটালিয়ান সদস্যদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘এছাড়াও একটি বিশেষায়িত গার্ড ব্যাটালিয়ানসহ নতুন আনসার ব্যাটালিয়ন গঠন , ব্যাটালিয়ান আনসার সদস্যদের স্থায়ীকরণের মেয়াদহ্রাস এবং আনসার ব্যাটালিয়নের তিনটি পদবির বেতন গ্রেডের ধাপ উন্নীত করা হয়েছে। বাহিনীর অবকাঠামোসহ সর্বক্ষেত্রে আধুনিকায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে রেঞ্জ,জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ভবন নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন,জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন, বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ যেকোন প্রয়োজনে এ বাহিনীর সদস্যরা নিবেদিত ও সদা তৎপর। বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণের শুরুতেই মৃত্যু ঝঁকি উপেক্ষা করে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম,মাস্ক বিতরণ,শ্রমিক সংকটকালে কৃষকদের ফসল ঘরে তোলা,ত্রাণ বিতরণ এবং হাসপাতালে আগত রোগীদের সহায়তাকরণসহ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে নিবন্ধন কার্যক্রমে সহযোগিতা ও কোভিড -১৯ বিশেষায়িত হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে এ বাহিনীর সদস্যদের সাহসী উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন, আমি আশা করি , বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সুনাম , ঐতিহ্য ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে দেশ ও জাতির শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে আরও অবদান রেখে জাতির স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে। আমি ‘বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এবং ৪২তম জাতীয় সমাবেশ -২০২২’এর সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উন্নয়নমূলক বিভিন্ন অবকাঠামোর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সবশেষে ব্যাটালিয়ন ফরমেশন এ মার্চ পাস্ট করে স্বরাষ্টমন্ত্রীকে অভিবাদন জানিয়ে প্যারেড শেষ করে। এরপর বাহিনীর ছাতা লেক পাড়ে মনঃমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। বাহিনীর অর্কেস্ট্রা দলের পরিবেশনায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড গান ও সংলাপের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। বাহিনীর ৪২তম সমাবেশ উপলক্ষ্যে কেক কাটা হয়।