গ্রেফতারকৃত পৌর কাউন্সিলর মোর্শেদের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যার মামলা 

স্টার্ফ রিপোটার
প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট ২০২১ | ৫৩৯
গ্রেফতারকৃত টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। 
 
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শামসুল আলম টাঙ্গাইল সদর থানার ওসিকে তদন্ত শেষে প্রদিবেদন জমা দিতে বলেছেন। সি.আর ৮৫৬/২০২১
 
মামলাটি মোর্শেদের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা সৈয়দ শরিফ উদ্দিন (৫৬) বাদি হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও আর অজ্ঞাত ৩/৪ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। অপর দিকে সোমবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে তিন দিনের রিমান্ড শেষে মোর্শেদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 
 
তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানবীর আহমেদ। 
 
মামলার আসামীরা হলেন, টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে ও ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদ (৫২), ওই এলাকার মৃত আ. মোমেনের ছেলে মুন্সী তারেক পটন (৪৯), মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে পারভেজ খান রনি (৩৬), সোহেল ওরফে বাবু (২৭), দুলাল সূত্রধরের ছেলে অন্তর সূত্রধর (২৭), আতিকুর রহমান মোর্শেদের প্রথম স্ত্রী সুমা (৪৫), মুন্সী তারেক পটনের স্ত্রী লিনা (৪০), শামীম আল মামুনের ছেলে রাফসান (২৮), মৃত আজিজ মিয়ার ছেলে আয়নাল মিয়া (৪৫)।
 
মামলা সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলর মোর্শেদের বাসার সামনে সৈয়দ শরিফ উদ্দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসা ভাড়া থাকতেন। সেখান থেকে ২০১২ সালের জুন মাসে তার মেয়ে পিংকিকে মোর্শেদের লোকজন অপহরণ করে। পরে ১৭ নং ওয়ার্ডের কাজী মোস্তফার মাধ্যমে মোর্শেদ ও সৈয়দ আমেনা পিংকির বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর জোর করে কাজী মোস্তফার বালাম বই থেকে মোর্শেদ তাদের কাবিন নামা ছিড়ে ফেলে দেয়। তাদের সংসারে ছয় বছরের এক মেয়েও রয়েছে। দুই স্ত্রী থাকায় মোর্শেদের পরিবারের মাঝে মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে মুন্সী তারেক পটনের বাসায় দাওয়াতের কথা বলে পিংকিকে নিয়ে যায় মোর্শেদ। সেখানে নিয়েই অভিযুক্ত আসামীরা পিংকিকে হত্যা করে লাশ গুম করে। 
 
দ্বিতীয় স্ত্রী বাবা সৈয়দ শরিফ উদ্দিন বলেন, আমার মেয়ে পিংকিকে মোর্শেদ জোড় করে অপহরণ করে বিয়ে করে। এরপর মোর্শেদসহ তার বাহিনীর লোকজন আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। মোর্শেদসহ তার ক্যাডার বাহিনীর ফাঁসির দাবি জানান তিনি। 
 
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, রিমান্ডে মোর্শেদ জিজ্ঞাসাবাদে তার ওই অস্ত্র এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। তার দেয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। 
 
টাঙ্গাইল সদর থানা সূত্র জানায়, এছাড়াও মোর্শেদের বিরুদ্ধে দুই যুবলীগ নেতা হত্যা, ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা, ব্যবসায়ী তুহিন হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের এক ডজন মামলা হয়েছে বিভিন্ন সময়। তবে এর মধ্যে মোর্শেদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
 
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদকে গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে পৌরসভার সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পরে তার বিশ্বাস বেতকা এলাকার বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে দুইটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার (২০) আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোর্শেদকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সোমবার (২৩ আগস্ট) তিনদিনের রিমান্ড শেষে মোর্শেদকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
 
২০১১-১২ থেকে দুই বছর জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আতিকুর রহমান মোর্শেদ। এরপর টাঙ্গাইল শহর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বর্তমানে তার দলীয় পদ না থাকলেও শহর আওয়ামীলীগের দলীয় বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ নিতেন তিনি।