প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় অবৈধ্ভাবে ফসলী জমির মাটি কাটার অভিযোগ


টাঙ্গাইলের বাসাইলে ফসলি জমির উর্বর মাটি ইটভাটা ও বসতি বাড়িতে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী মহল। দীর্ঘদিন যাবত উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের কামুটিয়া এলাকায় অবৈধভাবে দুটি ভেকু লাগিয়ে মাটি বিক্রি করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ দলীয় প্রভাব ও কাশিল ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে প্রায় আড়াই মাস যাবত ফসলি জমির উর্ভর মাটি বিক্রি করছেন তারা। এতে ধূলা বালির কারণে রাস্তায় চলাচলের অসুবিধাসহ অতিষ্ট হয়েছে এলাকাবাসী। বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেও কোন সুরাহা পায়নি স্থানীয়রা। প্রশাসনের উর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে জনগন।
স্থানীয়রা জানান, কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মির্জা রাজিক, সাবেক চেয়ারম্যান খান বাহাদুর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির খান কামুটিয়া কৃষি নিজস্ব ভূমির বালি সংস্কার প্রসঙ্গ প্রকল্পের নামে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে ফসলি জমির উর্ভর মাটি বিক্রি করছে। দুটি ভেকু লাগিয়ে তারা অবৈধ মাটির ব্যবসা করে যাচ্ছে। রাস্তা দিয়ে অবৈধ ভারী যানবাহন চলাচল করায় এলাকার পাকা রাস্তা-ঘাট খানা খন্দককে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়াও ধূলাবালির কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ধূলাবালির বিষয়ে প্রতিবাদ করলেই চেয়ারম্যানের লোকজনের হুমকি ধামকি দেয়। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা পাওয়া যায়নি।
ওই এলাকার আজগর আলী বলেন, ‘প্রায় আড়াই মাস যাবত কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাব খাটিয়ে কৃষকদের ভয় দেখিয়ে ফসলি জমির উর্ভর মাটি বিক্রি করছে। প্রতিদিন শতশত গাড়ি যাতায়াত করায় পাকা রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে এলাকায় থাকা খুব কষ্ট হয়। ধুলাবালির কারনে বাড়িতে বসে থাকা যায় না। ঘরের ভিতরেও ধুলাবালু প্রবেশ করে। খাওয়ার সময় ভাতের প্লেটের উপর দিয়ে ধুলা উড়ে। আমরা এলাকাবাসী খুব দুর্ভোগে দিন পার করছি।’
অপরজন সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগসহ আরো কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা সিন্ডিকেট করে উর্ভর মাটির ব্যবসা করে যাচ্ছে। তাদের ছত্র ছায়ায় মাসের পর মাস ভেকু লাগিয়ে বালুর ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিদিন তারা পাঁচ শতাধিক ট্রাক মাটি বিক্রি করে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে আমাদের খুব ভয়ে থাকতে হয়।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, ‘বালু খেকোরা খুবই ক্ষমতাশালী। যে কারণে প্রশাসনকে অবগত করেও কোন প্রকার সুরাহা পাইনি। অবৈধ বালু বিক্রির প্রতিবাদ করলে আমাদের ভয়ে দিন পার করতে হয়। আগে জানতাম জনপ্রতিনিধিরা সমাজের উন্নয়ন করে। এখন দেখি উর্ভর মাটি বিক্রি করে এলাকা ধ্বংশ করছে। কার কাছে যাবো, কার কাছে বিচার চাইবো। তারা খুবই ক্ষমতাবান ব্যক্তি। এই ঘাটের মাটি বেশির ভাগ ইট ভাটায় যায়। আর কিছু মাটি বসত বাড়িতে বিক্রি করে তারা।’
এ বিষয়ে কাশিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির খান বলেন, ‘মাটি কাটার বিষয়টি আমি জানি। তবে মাটি কাটার সাথে আমি জড়িত নয়।’
কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান বাহাদুর বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বর্তমান চেয়ারম্যান মির্জা রাজিক মাটি কেটে বিক্রি করছে। আমি প্রথমে করছিলাম। ওই খানে আমারও জায়গা আছে। কাটা শুরু করলে ওই সময়ে প্রশাসন এসে বন্ধ করে দেয়। পরে বর্তমান চেয়ারম্যান কথা বার্তা বলে আবার চালু করছে। দীর্ঘদিন যাবত তারা চারটি ভেকু দিয়ে মাটি কাটছে।
এ ব্যাপারে কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা রাজিক বলেন, ‘বর্ষার মধ্যে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে মাটি কৃষি জমির উপর পড়ে। যার যার জমি থেকে মাটি সে সে সরাচ্ছে। ওটা কোন ঘাট নয়। যার যার জমি মাটি বিক্রি করে বাড়ি ঘর করছে। আমি এটার সাথে জড়িত নয়। আপনি পারলে বন্ধ করে দেন।
বাসাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহিয়ান নুরেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি। কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে না করা হয়েছে। তারপরও যদি মাটি কাটে তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বদলি জনিত কারণে নতুন ইউএনও যোগদান না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে বিস্তারিত ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।’