পাহাড়ের টিলা কেটে মাটি নেওয়া হচ্ছে
মির্জাপুরে লাল মাটিতে কালো থাবা


টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে লাল মটির পাহাড়ে কালো থাবা পড়েছে। একটি প্রভাবশালী মহল পাহাড়ের শ্রেণি পরিবর্তন করে লাল মটি কেটে তা ইটভাটায় বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে একদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা বাড়ছে, অন্যদিকে গ্রামীণ আঞ্চলিক রাস্তা ধ্বংস হচ্ছে। এতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে নিরীহ এলাকাবাসী। এমনই চিত্র দেখা গেছে উপজেলার তরফপুর ইউনিয়নের টাকিয়া কদমা (ভূঁইয়াপাড়া) ও দিগলচালা এলাকায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের তরফপুর ইউনিয়নের টাকিয়া কদমার ভ’ইয়াপাড়া ও দিগলচালা এলাকায় বাড়ি বানানোর নাম করে দুটি ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।
বড় বড় টিলা ভেকু মেশিন দিয়ে কেটে পাহাড়ের ওই লাল মাটি স্থানীয় কয়েকটি ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে স্থানীয় অভিযোগ করেন। আর ওই সব টিলার লাল মাটি শত শত ড্রাম ট্রাকে চলার ফলে গ্রামীণ রাস্তা মাটিতে মিশে যাচ্ছে। মাটি ভর্তি ড্রাম ট্রাক চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছে গ্রামের মানুষ।
স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ওই সব সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
পাহাড়ি এলাকায় মাটি কাটছেন বাঁশতৈল এলাকার রোকন মিয়া, শহিদুল ইসলাম । মাটি ভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে আঞ্চলিক পাকা সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি করে অবৈধভাবে মাটির ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েকজন প্রভাবশালী।
এদিকে বর্তমানে মির্জাপুর পৌরসভার ত্রিমোহন এলাকায় একাব্বর হোসেন এমপি সেতুর নিচে ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। এতে প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে একশ্রেণির মাটি ব্যবসায়ী ভেকু মেশিন দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতিবছরের মতো এ বছরও প্রভাবশালী মহল কয়েকটি স্থানে ১৫ দিন ধরে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা শুরু করেছে। পাহাড় ও টিলার ভোগদখলকারীদের রাস্তা সমতল করে বাড়ি বানানোর উপযুক্ত জমি বানিয়ে দেওয়ার নাম করে উঁচু পাহাড় ও টিলার লাল মাটি কাটা হচ্ছে।
অনেকে সবজি চাষের উপযোগী ও মাছ চাষের জন্য পুকুর তৈরি করতেও পাহাড় বা টিলার মাটি বিক্রি করে থাকে। এ সুযোগে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বন বিভাগের উঁচু পাহাড়ও কাটা হয় বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছে।
এ কারণে বেশির ভাগ পাহাড়ের গজারি, আম, কাঁঠাল, সেগুন, আকাশমণি, মেহগনি, ইউক্যালিপটাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছও কাটা পড়ছে। ফলে পাহাড়ি এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
টাকিয়া কদমা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, সমতল স্থানে বাড়ি বানানোর জন্য রোকন নামের এক মাটি ব্যবসায়ীর কাছে টিলার প্রতি ট্রাক মাটি ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
লতিফপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘বর্তমান সরকার মির্জাপুরের আঞ্চলিক সড়কগুলো পাকা করে দিয়েছে। আর মাটি ব্যবসায়ীরা ড্রাম ট্রাক চালিয়ে তা ধ্বংস করছে। আমরা এলাকাবাসী মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। কোনো রকমে বেঁচে আছি।’
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মালেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন টাকিয়া কদমা এলাকায় পাহাড় কাটার খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. মঈনুল হককে পাঠিয়েছিলাম, কাউকে পাওয়া যায়নি। মির্জাপুরের যেকোন এলাকায় মাটি কাটার খবর পেলে তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।