গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন প্রতিবন্ধী দম্পতি

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:১৩ এএম, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭ | ৪৪৫

সাধারণত গ্রামগঞ্জে প্রায় দেখা যায় অনেক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ সামান্যতম অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হলে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে সাহায্য বা ভিক্ষুক পেশায় নেমে পড়ে।

কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে স্বামী স্ত্রী দুজনে প্রতিবন্ধী হওয়ার স্বত্বেও ভিক্ষা বা সাহায্যের জন্য কারো কাছে মাথা নত করে হাত না বাড়িয়ে গান গেয়েই নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। প্রতিবন্ধী দম্পতির বাড়ী উপজেলার বগলডাঙ্গী গ্রামে।

প্রতিবন্ধী দম্পতি হলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আসাদুল ইসলাম(৩০) ও দৃষ্টি ও হাত প্রতিবন্ধি খাদিজা বেগম(২৫)। স্ত্রী খাদিজাকে পাশে নিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গায়ক আসাদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে শরিয়তি, মারফতি, মাইজভান্ডারী ও পল্লীগীতি গান গেয়ে লোকজন খুশি হয়ে যে উপহার দেয় তা দিয়ে কোনমতে জীবন চলে আমার।

তবে নিজেদের বসবাসের জন্য কোন বাড়ী ঘর না থাকায় বিভিন্ন এলাকার লোকজনের বাড়ীতে রাত্রিযাপন করেন এই দম্পতি।

এমনি ভাবে দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থেকে রানীশংকৈল উপজেলার রাঘবপুর গ্রামে গান গাইতে আসি, এসময় স্থানীয়রা আমাকে আর ফিরে যেতে দিতে না চাওয়ায় এখানেই থেকে যায়। পরে গ্রামের লোকজন আমাকে ঐ গ্রামের মুক্তার হোসেনের প্রতিবন্ধী কন্যার সাথে বিবাহ দেয়।

এর পর হতে আমি বাজারে বাজারে গান গেয়ে উপার্জন করেই স্বামী স্ত্রী মিলে মাথাগুজার ঠাঁই বিহীন অবস্থায় সংসার করছি।

শিক্ষাগত যোগ্যতা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রতিবন্ধি আসাদুল গানের সুরে বলেন, ইংলিশে যেমন তেমন বাংলায় মেট্রিক ফেল, বদনা ফাটায় গান গাইতে গাইতে জীবন চলে গেইল। তবে বর্তমান আধুনিক সময়কালে হাতে হাতে মোবাইল।

বাজারে বাজারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষজন এখন গান শুনছে তাই আমার এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধির গান আর মানুষ সেভাবে শুনতে চাই না পাশাপাশি গান শুনে মুগ্ধ হয়ে আগেরমত টাকা পয়সা দেয় না।

তাই তিনি এবারে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতে চান। তবে এর আগে বাঁধ সাধে মাথা গুজার ঠাঁই নিয়ে গরমের সময় যেখানে সেখানে রাত্রি যাপন করলেও এখন শীতকাল। তাই গত ৯ নভেম্বর উপজেলার বগলাডাঙ্গী বাজারের পাশে মাথা গুজার ঠাঁইয়ের জন্য সামান্যতম জায়গা ঘেরে নিতে চাইলে বাধা দেন বাজারের লোকজনরা।

খবর পেয়ে ঐ বাজারে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) সোহাগ চন্দ্র সাহা। সেখানে গিয়ে ঘর তুলতে বাধাঁ দিয়ে নিজেই মানবতার কাছে হার মেনে।

প্রতিবন্ধি স্বামী স্ত্রীর মাথা গুজার ঠাইঁয়ের জন্য সরকারীভাবে জায়গা বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এতে খুশি হয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) সোহাগ চন্দ্র সাহার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রতিবন্ধি স্বামী স্ত্রীসহ স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি) সোহাগ চন্দ্র সাহা সমাজে অবেহেলিত প্রতিবন্দিদের সাহায্যে আসলে আমাদের সকলকে নিজে থেকে এগিয়ে আসা উচিত মন্তব্য করে বলেন,আমি প্রতিবন্ধি স্বামী স্ত্রীর জন্য দ্রুত জায়গা বন্দোবস্ত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছি।