টাঙ্গাইলে মানসিক প্রতিবন্ধী ৬ মাসের গর্ভবতী

স্টার্ফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০৮:১৫ এএম, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০১৯ | ২৬০

পরনে ছেড়া ময়লা কাপড়। মাথার কাছে কয়েকটি পোটলা নিয়ে অসুস্থ্য শরীরে খোলা চৌকির উপর শুয়ে কাতরাচ্ছে একটি মেয়ে। বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। কালো বর্ণের মলিন চেহারার মেয়েটিকে দেখার জন্য মানুষ চারদিকে ভীড় জমিয়েছেন। এরমধ্যে এক ব্যক্তি ২টো পাউরুটি নিয়ে মেয়েটির হাতে দিলেন খেতে । ক্ষুধার্ত পেটে পাউরুটি পেয়ে সে মহাখুশি। কোন দিকে না তাকিয়ে নিমিষেই খেয়ে ফেললো পাউরুটি দুটো।

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া বাসস্ট্যান্ডের পূর্বপাশে বুধবার দুপুরের ঘটনা এটি। পরে জানা যায় মেয়েটি মানসিক প্রতিবন্ধী এবং গর্ভবতী। স্থানীয়রা মেয়েটিকে নিয়ে নিকটস্থ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে যান। সেখানে দায়িত্বরত পরিদর্শিকা মর্জিনা বেগম প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে বলেন মানসিক প্রতিবন্ধী এই মেয়ে ৬ মাসের গর্ভবতী। সে শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল এবং গায়ে জ¦র রয়েছে। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। এভাবে পথে পথে ঘুরতে থাকলে সে মারাও যেতে পারে। হাসপাতালে থাকা অন্যরা মেয়েটিকে দেখে মর্মাহত হন।

মেয়েটি তার নাম পরিচয়, গ্রাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারছে না। সে রাস্তায় কে বা কাদের দ্বারা ধর্ষিত হয়ে গর্ভবতী হয়েছে, নাকি গর্ভবতী হয়ে বাড়ি থেকে চলে এসেছে এবিষয়েও কিছু বলছে পারে না। তবে মেয়েটির সাথে আকার ইঙ্গিতে কথা বলে স্থানীয়দের ধারণা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার সুযোগ নিয়ে মানুষ নামক কোন পশু বা পশুদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েই সে গর্ভবতী হয়েছে। এধরনের হৃদয় বিদারক ঘটনা সমাজে প্রতিনিয়তই ঘটছে।

উপজেলার মাইস্তা গ্রামের জমশেদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন দুতিন দিন যাবত এই পাগলীটাকে এলাকায় দেখতেছি। মঙ্গলবার খুব ক্লান্ত অবস্থায় আমদের গ্রামে এসে খেতে চাইলে আমি বাড়িতে খেতে দেই। সে গর্ভবতী হয়েছে এটা দেখাচ্ছে সবাইকে।

টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন যদি এই মানসিক প্রতিবন্ধী ধর্ষিত হয়ে গর্ভবতী হয়ে থাকে, তবে অপরাধীদের খুঁজে বের অবশ্যই শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে সমাজের এই ভয়াবহ ব্যাথি রোধ করা সম্ভব হবে না। ধর্ষনের ফলে মেয়েটির বাচ্চা হলে এর দায়ভার কে নেবেন কিংবা বাচ্চাটি কার পরিচয়ে বড় হবে? তিনি আরো বলেন মেয়েটির পরিচয় ঠিকানা বের করার জন্যে পুলিশসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

এবিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহআলম বলেন এধরনের ঘটনায় স্থানীয় থানায় জিডি করার পর গর্ভবতীকে গাজীপুরের পুবাইলে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে প্রসবের পর বাচ্চাটিকে এতিমখানায় লালন পালনের জন্য দেওয়া হয়। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব। সেইসাথে মেয়েটির পরিচয় পেলে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।