কাকরাইলে মা-ছেলেকে হত্যার ঘটনায় স্বামী আটক


রাজধানীর কাকরাইলে মা-ছেলের খুনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামী আব্দুল করিমকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া ওই বাড়ির দারোয়ান ও নিরাপত্তাকর্মীকেও আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় একটি বাড়িতে ঢুকে মা ও ছেলেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত ব্যক্তিরা হলেন শামসুন্নাহার (৪৬) ও তার ছোট ছেলে সাজ্জাদুল করিম ওরফে শাওন (১৮)।
পুলিশ সাজ্জাদুলের লাশের পাশ থেকে একটি রক্তমাখা ছুরি উদ্ধার করেছে। সাজ্জাদুল উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এ লেভেল পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
পুলিশ বলেছে, শামসুন্নাহার ছাড়াও ব্যবসায়ী আবদুল করিমের আরেক স্ত্রী আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহ ও অর্থসম্পদ নিয়ে বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
নিহত শামসুন্নাহার তার স্বামী করিম ও ছোট ছেলে সাজ্জাদুলকে নিয়ে রাজমণি প্রেক্ষাগৃহের পশ্চিম দিকে ভিআইপি রোডের ‘মায়াকানন’ নামে নিজ বাড়ির পঞ্চম তলায় থাকতেন। তাদের অপর দুই ছেলের মধ্যে একজন যুক্তরাজ্যে, আরেকজন কানাডায় পড়াশোনা করছেন। ঘটনার সময় করিম পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে পেঁয়াজ ও আদার আড়তে ছিলেন। করিমের নয়াপল্টনে পলওয়েল মার্কেটে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা ছাড়াও আরও কয়েকটি ব্যবসা আছে। যে বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান খুন হয়েছেন, তার পাশে করিমের আরও দুটি ছয়তলা বাড়ি আছে।
সন্ধ্যা সাতটার পর পুলিশ বাড়ির দারোয়ান নোমান ও গৃহকর্মী রাশিদা বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় রাশিদা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, কিছুদিন আগে তিনি এই বাড়িতে খণ্ডকালীন কাজ নেন। গতকাল মাগরিবের নামাজের পর তিনি দরজায় টোকা দিলে গৃহকর্ত্রী দরজা খুলে দেন। তিনি রান্নাঘরে ঢোকার পর বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেওয়া হয়। রাশিদা বলেন, ‘আমি চিৎকার করে বলেছিলাম, আম্মা দরজা বন্ধ করলেন কেন, দরজা খোলেন। এ সময় “বাঁচাও” “বাঁচাও” বলে চিৎকার করছিল কেউ। কিছুক্ষণ পর বাড়ির দারোয়ান এসে ছিটকিনি খুলে দেন।’ তিনি বলেন, হত্যার কারণ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের অপরাধ শনাক্তকরণ দল ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কৃষ্ণপদ বলেন, মায়াকানন ছাড়াও এই এলাকায় করিমের আরও দুটি বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ নিয়ে পারিবারিক কলহ থাকতে পারে।
পুলিশের রমনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার নাবিদ কামাল বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহ ও অর্থসম্পদ নিয়ে বিরোধের জের ধরে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
বুধবার (১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে মা-ছেলের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।