কালিহাতীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প বিলুপ্তির পথে

কালিহাতী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:০৯ পিএম, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৭ | ৮৫১

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় হাজারো বছরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক সময় এ উপজেলায় মৃৎ শিল্পের খ্যাতি ছিল অনেক।

কিন্তু আজকাল এ্যালমোনিয়াম, মেলামাইন এবং বিশেষ করে সিলভারের রান্নার হাড়ি কড়াই প্রচুর উৎপাদন ও ব্যাবহারের কারনে মৃৎ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। এ মৃৎ শিল্প হাজার বছর ধরে চলে আসছে।

এমন দিন ছিল যখন গ্রামের মানুষ মাটির তৈরী হাড়ি, কড়াই, থালা বাসন ইত্যাদি দৈনদিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয় উপকরন হিসেবে ব্যবহার করত। কিন্তু আজ বদলে যাওযা পৃথিবীতে সবই নতুন রুপ।

এক সময় কুমাে পল্লীতে ছিল মাটির তৈরী জিনিসের সমাহার। কিন্তু এখন আর কুমারদের কর্তৃত্ব নেই এখানে। তারা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য জীবন যুদ্ধে লড়াই করে কোন রকম নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে।

এ সম্প্রদায়ের লোকজনেরা মাটির তৈরী হাড়ি, পাতিল, ঠিলা, কলসী, সড়া, ফুলের টব, মাটির ব্যাংক, পুতুল, প্রতিমা ইত্যাদি মাথায় করে গ্রামে, হাট বাজারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে সংসার চালাতো। ছয়মাস ধরে তারা মৃৎ শিল্প তৈরী করে আর ছয় মাস বিভিন্ন কায়দায় বিক্রি করতে দেখা যেত।

পাল মশাইরা মাটির তৈরী করা আসবাবপত্র চিটা ধানের বিনিময়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। উপজেলার সদর উত্তর বেতডোবার সুরেশ পাল জানান, ব্যবসা মন্দার কারনে আমাদের এখানকার মৃৎ শিল্প প্রস্তুতকারী প্রায় একশত পরিবার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাড়ি জমিয়েছে। প্রায় ৫ শত পরিবার অন্য পেশার সাথে জড়িত।

সরেজমিনে মৃৎ শিল্পীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কাচাঁ মাটি সাঁেজ দিয়ে পরবর্তীতে কাঠ দিয়ে তাদের হস্তচালিত মেশিনে পোড়ানো হয় পোড়ানোর পরে লাল মাটি ও রং দেওয়া হয়।

উত্তর বেতডোবার খুশী মোহন পাল ও হরিদাস পাল জানান, বর্তমানে কাঠ ও মাটির দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে তাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তার উপরে বাজারে মাটির তৈরী জিনিসের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ ব্যবসা এখন হুমকীর মুখে পড়েছে। ভবিষ্যতে এ ব্যবসা থাকবে কি-না তা নিয়ে নিজেরাই সংশয়ে রয়েছে।

তার পরেও সরকারী বা বেসরকারী সংস্থাগুলো থেকে সার্বিক সহযোগীতা পাওয়া যায় তাহলে তারা নতুন করে ঘুরে দাড়াতে পারবেন। মৃৎ শিল্পও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।